এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৮

আওয়ামী লীগে শাহরিয়ার বিএনপির আস্থা চাঁদ

চারঘাট-বাঘা উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৬ আসন গঠিত। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।

রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) শাহরিয়ার আলম সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। এখানে শাহরিয়ার আলম ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে এবার শাহরিয়ারকে লড়তে হবে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে।

বিএনপি থেকেও আসনটিতে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের টানা দুইবারের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। মনোনয়নপ্রত্যাশায় নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে তারা ভোটারদের দোয়া চেয়েছেন। বড় দুই দলের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন রিন্টু এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গণসংযোগ করছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি শাহরিয়ার আলমের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয়ের খবর পাওয়া যায়নি। মনোনয়ন বিক্রির প্রথম দিন গত ৯ নভেম্বর তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। বিভিন্ন কর্মকা- দিয়ে এরই মধ্যে তিনি সরকারের মন্ত্রিসভা ও স্থানীয় ভোটারদের কাছে আস্থা অর্জনে এগিয়ে আছেন। এর বিপরীতে বিএনপি নেতা চাঁদ শুধু এলাকারই নয়, উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নেতা তিনি। এক সময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-৬ আসনে ‘ওয়ান ইলেভেন’ পরবর্তী ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে প্রথমবারের মতো এমপি হন শিল্পপতি শাহরিয়ার আলম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়নি তাকে। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কান্ডারি সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত শাহরিয়ার আলমের ঠাঁই হয়েছে মন্ত্রিসভায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এলাকার মানুষের সঙ্গে। দেশ-বিদেশের যেখানেই থাকুন সপ্তাহ শেষে অন্তত একবার নিজ এলাকায় আসতে চেষ্টা করেন এই এমপি। নিজ সংসদীয় এলাকায় ফিরলেই তিনি গ্রামের পাড়া-মহল্লা চষে বেড়ান। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেন।

সূত্র মতে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হবেন চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ। তবে বর্তমানে রাজনৈতিক মামলায় তিনি রয়েছেন কারাগারে। রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগে যেমন শাহরিয়ার আলমের কোনো বিকল্প নেই, তেমনি বিএনপিতেও আবু সাঈদ চাঁদেরও বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, ‘এই আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে আছি। সরকারি সহযোগিতা না পেলে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা দিয়ে আসছি। এ আসনের প্রতিটি এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা সব জায়গাতেই উন্নয়ন করেছি। ফলে আমার উন্নয়নের কথা একবার মনে করলে জনগণের অন্যদিকে যাওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই বলে মনে করি। এছাড়াও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন চারঘাট-বাঘা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। ফলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দল থেকে আবারো আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে বিশ্বাস করি।’

স্থানীয়দের ভাষ্য, বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সমানতালে লড়তে হলে বিএনপিকে অবশ্যই চাঁদের কথা ভাবতে হবে। না হলে জয়ের লড়াইয়ে ফল ভিন্নও হতে পারে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক বলেন, ‘নানা কারণে নেতাকর্মীরা এখন দ্বিধা বিভক্তিতে ভুগছেন। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই। আমি যখন সংসদ সদস্য ছিলাম তখন দলে কোনো বিভেদ ছিল না। এখন নানা দল, উপদলে বিভক্ত। তাই এখানে আওয়ামী লীগকে আবারও শক্তিশালী করতে এবার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশায় আছি।’

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘১৯৮৬ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে আজ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দায়িত্ব সক্রিয়ভাবে পালন করছি। ছাত্র জীবনে রাজশাহী সিটি কলেজের জিএস ছিলাম। জাসাসের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম। ছাত্র জীবন থেকেই দলের সব আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিএনপি একটি বৃহত্তর দল হিসাবে এবং বর্তমানের সরকার পরিবর্তনের হাওয়ায় অনেকেই মনোনয়ন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে সেই প্রার্থীর সাংগঠনিক কর্মকা- বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বর্তমান সময়ের জন্য অতীব জরুরি। আর দলের জন্য নিবেদিত ব্যক্তির মূল্যায়ন করা হলে মনোনয়নের গ্রহণযোগ্যতায় আমার নাম উঠে আসবে বলে বিশ্বাস করি।’

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আয়তন ৩৯৪ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটির মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৩ হাজার। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬৭ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৪ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৯টি এবং ভোটকক্ষ ৫৮৭টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close