কূটনৈতিক প্রতিবেদক

  ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

ভুল বার্তায় মিয়ানমারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৩৭২ জন

মুসলিম রোহিঙ্গারা প্রবেশ করায় অচিরেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নৃগোষ্ঠীদের বাংলাদেশ ছাড়তে হবেÑ এমন ভুল বার্তায় মিয়ানমারে গিয়ে জেলের ঘানি টানছেন ৩৭২ জন। গত বছরের নভেম্বর থেকে চলে যাওয়া এসব বাংলাদেশিদের দ্রুত মুক্তির সম্ভাবনাও কম। কারণ এদের নাগরিকত্ব যাচাই একটি লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা সংকটের শুরুর দিকে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক আশ্রয়স্থল তৈরি, খাদ্য, সেবা, চিকিৎসাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিল তা এ অঞ্চলের মানুষ পায়নি। ফলে এক ধরনের দ্বিধায় পরে যায় তারা। আর এ কারণেই রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেও এসব বাংলাদেশি মিয়ানমারে চলে যায়।

২০১৭ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঝে এ ধরনের ভুল বার্তা যায়। রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের হামলা চলছিল সে ধরনের হামলা তাদের ওপর আসতে পারে বলেও আশঙ্কা ছিল তাদের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৩৭২ জনের প্রায় ৮৩টি পরিবার রোহিঙ্গা সংকটের সময় মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করে। তারা বর্তমানে দেশটিতে কারাবন্দি রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এদের তালিকা দেওয়া হয়েছে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য। যাচাইয়ের ফলে পরিচয় নিশ্চিত হলে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। ‘মুসলিম রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসায় অচিরেই তাদের বাংলাদেশ ছাড়তে হবে- এমন একটি ভুল বার্তা সে সময় বাংলাদেশের এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঝে যায়। ফলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এ পরিবারগুলো মিয়ানমারে চলে যায়,’ বলেন ওই কর্মকর্তা।

জানা যায়, এই ৩৭২ জন বাংলাদেশির মিয়ানমারের সীমানায় অনুপ্রবেশের কথা এ বছরের জুলাই মাসে কূটনৈতিক পত্র বা নোট ভারবাল দিয়ে বাংলাদেশকে জানায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২ আগস্ট মংডু সফর করে। সফর শেষে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে যখন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছিল, তখন মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। সীমান্তে ঢিলেঢালা নজরদারির সুবাদে বাংলাদেশিদের অনেকে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করেছে।

প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এসব বাংলাদেশির মধ্যে বার্তা পৌঁছেছে, মুসলিম রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসায় বাংলাদেশের ভিন্ন ধর্মী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মিয়ানমারে চলে যেতে হবে। ফলে অনেকেই অভিবাসনের উদ্দেশে পরিবারসহ মিয়ানমারে পাড়ি জমিয়েছে।

বাংলাদেশে এখন পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেস পারসন ফর্ম রাখাইন স্টেট’ চুক্তি অনুয়ায়ী এ বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া শুরুর কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার কথা দিলেও তা রাখছে না।

সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয় যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের এখনো সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া উত্তর রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার ভীতি কাটিয়ে ওঠার আগেই সেখানে আরো সেনাসদস্য মোতায়েন চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close