আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পেট থেকে গজিয়ে ওঠা গাছে মিলল ইতিহাসের সন্ধান

পেটে ছিল ডুমুর ফলের দানা, তা থেকেই গাছ! আর সেই গাছই সন্ধান দিল বছর চল্লিশ আগের এক হত্যাকান্ডের।

১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে গ্রিকদের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ বাধে তুর্কিদের। সেই লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন আহমেত হারগিউন নামের এক ব্যক্তি। সে যুদ্ধে ২ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হন। খোঁজ মেলেনি হাজার খানেক লোকের। আহমেতও নিখোঁজের তালিকায় ছিলেন। এত দিনে তার মৃত্যুর খবর দিল পাহাড়ের গায়ে ডালপালা মেলে গজিয়ে ওঠা ডুমুর গাছ।

২০১১ সালে এক গবেষকের চোখে পড়েছিল গাছটি। পাহাড়ের গুহায় ওই রকম একটা গাছ দেখে চমকে যান তিনি। কারণ, পাহাড়ি এলাকায় ডুমুরের দেখা মেলে না। খোঁজ শুরু করেন তিনি। লোকজন ডেকে গাছের চার পাশে মাটি খুঁড়তে থাকেন। আর তাতেই সামনে আসে গোটা ঘটনা। গাছের ঠিক নিচে চাপা পড়েছিল কঙ্কাল। পাশে আরো দুটি দেহাবশেষ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মারা যাওয়ার আগে হয়তো ডুমুর খেয়েছিলেন আহমেত। মৃতদেহের পাকস্থলীতে থেকে যাওয়া ডুমুরের বীজই জন্ম দেয় আর একটি প্রাণের।

ইতিহাস খুঁড়ে জানা যায়, বাকি কাহিনি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আহমেতসহ তিনটি লোককে গুহায় আটকে রেখে ডিনামাইট ফাটিয়ে খুন করেছিল প্রতিপক্ষ। ডিনামাইটে বড় গর্ত তৈরি হয়েছিল গুহার উল্টো দিকের দেয়ালে। সেখান দিয়ে বন্যার পানি ঢোকে গুহায়। সূর্যের আলোও এসে পড়েছিল গুহার ভিতরে। পানি-আলো পেয়ে আহমেতের পেটে থাকা বীজ থেকে জন্ম নেয় চারাগাছ। কঙ্কালটি যে আহমেতের, তা জানা যায় আর এক দল বিশেষজ্ঞের সৌজন্যে। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। পরিবারের থেকে নিখোঁজ ব্যক্তির বর্ণনা নেওয়া হয়। যেমন, শেষ দেখার সময়ে তিনি কী পরে ছিলেন ইত্যাদি। বাড়ির লোকেদের থেকে সংগ্রহ করা হয় রক্তের নমুনাও, যাতে ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়। সেই সব মিলিয়েই জানা যায়, ওই গাছের জন্ম দিয়েছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, আহমেত।

আহমেতের বোন মুনুর এখন ৮৭ বছরের বৃদ্ধা। বললেন, ‘আমাদের গ্রামে চার হাজার লোকের বাস ছিল। অর্ধেক গ্রিক, অর্ধেক তুর্কি। ’৭৪ সালে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়। আহমেত তুর্কিদের দলে যোগ দিয়েছিল। দিনটা মনে আছে। ১০ জুন। ভাইকে তুলে নিয়ে যায় গ্রিকরা। আর সন্ধান মেলেনি ওর। বছরের পর বছর খুঁজেছি। কিন্তু এভাবেও খোঁজ পাওয়া যায়! ভাবিনি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close