মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কক্সবাজারে ৫ বার উচ্ছেদের পরও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের তরঙ্গ রেস্তোরাঁর পাশে বেআনিভাবে সরকারি জমি দখল ও ভরাট করা হয়েছে। এরপর সেখানে ‘হাঁড়ি’ নামের রেস্তোরাঁ তৈরির চেষ্টা চলছে গত দেড় বছর ধরে। তবে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেটের নেতৃত্বে দফায় দফায় ৫ বার উচ্ছেদ করে ওই জমি দখলমুক্ত করা হয়। ঝাউগাছ রক্ষায় ওই জমি বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রাখে বন বিভাগ। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন দখল উচ্ছেদ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেন ‘প্রিয় কক্সবাজার সদর উপজেলাবাসী, ছবিগুলো ভালো করে দেখুন। মাত্র এক রাতের মধ্যে বিচের পাশের এই জলাভূমি বালি দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করা হয়। এটি বন্ধ করা হয়েছে।’ কিন্তু এই স্ট্যাটাসের মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ওই জমিতে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘হাঁড়ি রেস্তোরাঁ’ নামের এক খাবার হোটেল। কেটে নেওয়া হয়েছে ২০টিরও বেশি ঝাউগাছ। রীতিমতো প্রশাসনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েই এখনো সেখানে প্রকাশ্যে চলছে ওই রেস্তোরাঁ বর্ধিত করার কাজ। এতে প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ওই রেস্তোরাঁর মালিক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এটি ৫ বার উচ্ছেদ করা হয়েছে ঠিক। কিন্তু পরে আমরা তা প্রশাসনের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েই রেস্তোরাঁর কাজ করছি।’

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত দেড় বছরে এখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ বার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানের ভিডিও চিত্র একাধিক টিভি চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এ ছাড়া বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঝাউগাছ রক্ষায় তা ঘেরাও দেওয়া হয়েছিল। আর এখন সেখানে ঝাউগাছ কেটে মাটি ভরাট করে দিনে-রাতে রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ চলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসব দখলের বিষয়ে এখন প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও আর কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এতে এলাকায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।’

স্থানীয় কবির আহমদ বলেন, ‘জমিটি দখলের দায়ে কলাতলী এলাকার নুর মোহাম্মদ নামের ওই ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক করে জরিমানাও করা হয়েছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো-তিনিই আবার প্রকাশ্যে ঝাউগাছ কেটে পাহাড়ের মাটি দিয়ে জলাশয় ভরাট করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এটি একাধিকবার উচ্ছেদ করা হয়েছিল এখন সেখানে হাঁড়ি নামের রেস্তোরাঁর কাজ চলছে বলে জানতে পেরেছি। কালই তা উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে।’ কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান বলেন, ‘রেস্তোরাঁটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল হোসেন এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১৩০ একর জমির মধ্যে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ৮৭টি প্লটের বিপরীতে ৮৬ দশমিক ৩১ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ওই বরাদ্দের মধ্যে সৈকত সড়কের সুগন্ধা পয়েন্টে তরঙ্গ রেস্তোরাঁর পাশে এস. আলম গ্রুপের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় একটি পল্ট। কিন্তু ২০১০ সালে সরকার এসব প্লটের বরাদ্দ বাতিল করে লাল পতাকা দিয়ে এসব জমি নিজেদের আয়ত্তে নেয়। পরে লিজ গ্রহীতারা উচ্চ আদালতে রিট করলে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন আদালত। বর্তমানে সরকার ও লিজ গ্রহীতার মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দখলদাররা সেখানে ঝাউগাছ নিধন করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close