নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

৯১-এর মতো ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ চান মওদুদ

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে যেভাবে প্রধান দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার গঠন করে নির্বাচন হয়েছিল, সেভাবে এবারও ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে’ একাদশ সংসদ নির্বাচন চান বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক প্রতিবাদ সভায় সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সংবিধানের বাইরে গিয়ে যদি আপনারা নির্বাচনকালীন সরকার করতে রাজি হন তাহলে আসুন সংবিধানের বাইরে গিয়ে আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, ‘আজকে তারা (আওয়ামী লীগ) বলছেন যে, নির্দলীয় সরকার অসাংবিধানিক। ১৯৯৫-৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই বলেছিলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তার ধারণা, এটা তার ব্রেইন চাইল্ড। ...আজকে তারাই উল্টো কথা বলেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে ‘সংবিধান মেনে’, অর্থাৎ তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে ২০১৩ সালের মতো এবারও নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করা হবে। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করা বিএনপি এখনো সেই দাবিতে অনড়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধান মানুষের জন্য লেখা হয়, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সুতরাং মানুষের কল্যাণের পথে সংবিধান কখনো বাধা হতে পারে না। ১৯৯১ সালের নির্বাচন আপনাদের মনে আছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছিলেন। সেটা কী সংবিধানে ছিল? ছিল না। পরে একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। এখানেও তাই হবে। আজকে সরকার বলছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার হবে। এই ধরনের সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নাই। তার মানে সংবিধানের বাইরে গিয়ে তারা এই সরকার করতে চাচ্ছেন। তাহলে আমরা যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছিÑ সেটাও তো সংবিধানের বাইরে থেকে করা যায়।

দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের রূপ নিলে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন তখনকার রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। প্রধান দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য হয়Ñ বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ হবেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। তিনি অন্তর্র্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন এবং নির্বাচন দেবেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তখনকার এরশাদ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ ইস্তফা দেন এবং ওই পদে আসেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। সেই সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি, খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে ১৯৯৬ সালে তখন বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করে। সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন ওই নির্দলীয় সরকারের অধীনেই হয়। এর মধ্যে দুইটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে বিএনপি জয়ী হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকে; তখনই এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২০১১ সালের ১০ মে এক রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই বছরই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। দশ বছরের আন্দোলনে সাফল্য না পাওয়া বিএনপি এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্নবহালের কথা বলছে না। তার বদলে নাম বদলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে তারা। সংগঠনের সভাপতি সাঈদ হাসানের মিন্টুর সভাপতিত্বে এ সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close