কাইয়ুম আহমেদ

  ২১ জুন, ২০১৮

তিন সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা কাল

খুলনায় জয়ের পর এবার আরো তিন সিটি নির্বাচনে জয়ের বিকল্প ভাবছে না আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, এই নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে জনমত পক্ষে রাখার চেষ্টায় দলটি। তাছাড়া এই তিন সিটিতে এবারই প্রথম সরাসরি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশলের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়েও সর্তক নেতারা। এদিকে, গতকাল বুধবার ঢাকায় ধানমন্ডিতে দলীয় কার্যালয় থেকে রাজশাহীতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশালে সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সিলেটে বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান মনোনয়ন কিনেছেন। তবে রাজশাহীতে একক প্রার্থী লিটন হলেও বরিশাল সিলেটে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাই সতর্কতার সঙ্গেই প্রার্থী বাছাই করতে চায় দলটি। এই দুই সিটিতে কারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তা জানা যাবে কাল শুক্রবার। কারণ, এদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত হবে প্রার্থী।

এদিকে, সূত্র জানিয়েছে, সিলেট ও রাজশাহীতে আগের বারের মেয়র প্রার্থীরা অপরিবর্তিত থাকলেও বরিশালে শওকত হোসেন হিরণের বিকল্প খুঁজছে আওয়ামী লীগ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস আগে ৩০ জুলাই ভোট হচ্ছে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে। এর আগে নতুন নগরপিতা বেছে নিতে গাজীপুরে ভোট ২৬ জুন। এর আগের নির্বাচনে খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটিতে ভরাডুবি হয় দলীয় প্রার্থীদের। এবার এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সতর্ক টানা দুইবার ক্ষমতাসীন এই দলটি। রাজশাহী থেকে সেখ জিয়াউল হক জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনে ১৪ দলের একক মেয়রপ্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত সোমবার রাজশাহী ১৪ দলের বৈঠকেও লিটনকে একক প্রার্থী মেনে নিয়ে তার পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন শরিক দলগুলোর নেতারা।

মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এককভাবে সভা করে প্রার্থী হিসেবে লিটনের নাম প্রস্তাব করে গতকাল বুধবার ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, লিটনই রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের একক মেয়রপ্রার্থীর মনোনয়ন পাবেন।

এদিকে, এরও আগে প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ লিটনের নামই ঘোষণা করে। গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীতে জনসভায় এসে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও লিটনকে মেয়র নির্বাচিত করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তবে দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সভা করে লিটনের নাম প্রস্তাবের ফলে লিটন আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের প্রার্থী হলেন।

এদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নওশের আলী জানান, নগরীর ৩৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও জীবনবৃত্তান্তসহ নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হবে ঢাকায়। এখন পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ডে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডগুলো থেকে দুই বা তিনজন করে প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো হবে।

বরিশাল থেকে বাপ্পী মজুমদার জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে পরিবেশ আরো উত্তাপ ছড়াচ্ছে। নৌকা প্রতীক চেয়ে মাঠে থেকে হাইকমান্ডে লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু কে প্রার্থী হচ্ছেন তা চূড়ান্ত হবে কাল শুক্রবার। কিন্তু আভাস রয়েছে বরিশালে দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি রয়েছে। তিনি চাইছেন একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। যিনি সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের মতো বরিশালবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, নৌকার প্রার্থী হতে আগ্রহী অন্তত হাফডজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা খান মামুন।

কিন্তু প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। যদিও এই নেতার পক্ষে নৌকা প্রতীক চেয়ে হাইকমান্ডে আগেই সুপারিশ পাঠিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তবে সব ছাপিয়ে আগামীকাল শুক্রবারই জানা যাবে কে হচ্ছেন বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী।

সিলেট থেকে মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়ন চাইছেন স্থানীয় ৫ নেতা। এরা হলেন, সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার, অধ্যাপক জাকির হোসেন এবং শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। এ নিয়ে গত সোমবার বর্ধিত সভা ডাকে মহানগর আওয়ামী লীগ। সেখানে আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বাদে বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু এতে একজন ছাড়া বাকিরা সাড়া দেননি। ফলে ৫ নেতার নামই কেন্দ্রে পাঠায় মহানগর আওয়ামী লীগ। ফলে এখানে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি তা জানতে কাল শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে সিলেট থেকে একাধিক নেতার মনোনয়ন চাওয়ায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৪১ নেতাকে ডাকা হয়েছে কেন্দ্রে। এদের মধ্যে রয়েছেন মহানগরের ২৯ জন এবং জেলার ১২ জন নেতা। এদের সঙ্গে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি বৈঠকে বসতে পারেন।

সূত্র জানায়, মনোনয়ন প্রত্যাশী এই ৫ নেতা হলেও আলোচনায় শীর্ষে আছেন দুই নেতা। তারা হলেন, সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

এ প্রসঙ্গে আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। সেখান দলীয় সভানেত্রেীর উপস্থিতিতে চুড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা প্রার্থী নির্বাচিত হলে মানুষের আশাআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist