এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৬ মে, ২০১৮

রাজশাহীতে পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই, নিষ্ক্রিয় প্রশাসন

যথাযথ নজরদারি ও দেখভালের অভাবে রাজশাহী নগরীতে বিক্রি হচ্ছে রোগাক্রান্ত ও গর্ভবতী গরু-মহিষ এবং ভেড়া-ছাগলের বাসি-পচা মাংস। এসব মাংস খেয়ে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। হাসপাতালে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, পায়ে পানি জমা, লিভারে চর্বি জমা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সব জটিল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এভাবেই প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। দেখভালের দায়িত্বে থাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক), জেলা প্রশাসক ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের কোনো কার্যক্রম নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নিয়ম থাকলেও জনবল সঙ্কটের অজুহাতে বর্তমানে তা নিষ্ক্রিয়। এতে পোয়াবারো হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার আইনে ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো লিখিত অভিযোগ করছেন না। ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে ধারণার অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃহস্পতিবার নগরীর কোনো স্থানেই পশু জবাই হয় না। এছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন সাহেববাজার, নিউমার্কেট, নওদাপাড়া, কোর্ট স্টেশন, লক্ষ্মীপুর, শালবাগান, কাজলা বেতারের মোড় ও উপশহর নিউমার্কেটে পশু জবাই হয়। তবে প্রতি শুক্রবার মহানগরীর বহরমপুর, ডিঙ্গাডোবা বাইপাস, হড়গ্রাম বাজার, ঘোসপাড়া মোড়সহ প্রায় ৩০০ স্থানে পশু জবাই হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ পশুই মাংস বিক্রির স্থানে জবাই হয় না। অন্য স্থান থেকে জবাই করে মাংস বিক্রির স্থানে নেওয়া হয়। যেসবের পরীক্ষা ছাড়াই গরু-মহিষ প্রতি ২০ টাকা, ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১০ টাকা আদায় করা হয়। ফলে সুস্থ বা অসুস্থ পশু পার্থক্য করার উপায় থাকে না।

নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার ক্রেতা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ বাবু বলেন, মহানগরীতে বসবাসকারীরা বাজারে মাংস কিনতে গিয়ে প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন। দেখভালের অভাবে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খাচ্ছে ক্রেতারা। বিক্রি করা মাংস মরা পশুর কিনা তাও জানার উপায় নেই। জবাইকৃত পশুর যেসব অংশ মানুষের খাবার অযোগ্য সেগুলো এখন বাদ দেয়া হয় না। মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। তদারকি না থাকলেও টাকা তুলতে পশু জবাই ফির রশিদ প্রদান করে রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অসুস্থ ও রুগ্ণ পশুর মালিকরা মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সস্তায় বিক্রি করে দেন। এরপর জবাই করে বাজারে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে এগুলো পশুর মাংস খাবার হোটেলে কম দামে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার এক ব্যবসায়ী। যে কারণে তিনি কোনো খাবার হোটেলে মাংস দিয়ে ভাত খান না বলেও জানিয়েছেন।

এদিকে, পশু জবাই ও মাংসের মাননিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১ তে বলা হয়েছে, জবাইয়ের উদ্দেশ্যে যেকোনো পশু ক্ষমতাপ্রাপ্ত ভেটেরিনারি কর্মকর্তা কর্তৃক জবাই উপযুক্ত ঘোষিত হতে হবে। পশু জবাইয়ের পর ভেটেরিনারি কর্মকর্তা দ্বারা বিধিমোতাবেক যথাযথভাবে পরীক্ষা করতে হবে। এ বিধান লঙ্ঘন করলে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ অনুযায়ী, অনূর্ধ্ব এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫-২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কিন্তু এ আইনের নেই কোনো তদারকি, নেই কোনো অভিযান। এছাড়াও নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করা হয়।

এ ব্যাপারে রাসিকের ভেটেরিনারি সার্জন ফরহাদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘মহানগরীতে কিলখানা না থাকার কারণে সঠিকভাবে পশু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এসব মাংস খেয়ে মানুষের হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, পায়ে পানি জমা হওয়া, লিভারে চর্বি জমা হওয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সব জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে রাসিকে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সমিতির নেতাদের অজ্ঞাতে কিছু কিছু দোকানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতাধীন তাদের সমিতির ৩৩০ জন সদস্য রয়েছে। যত্রতত্র পশু জবাই করে বাজারে মাংস নিয়ে আসা হয়। কারণ, মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো কিলখানা নেই।’

রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘বাজারে পরীক্ষার পর পশুর মাংসে সিল মারা হয়। তবে যেসব পশু বাইরে থেকে জবাই হয়ে আসে সেগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় করপোরেশনের অনেক কাজই যথা সময়ে করা যাচ্ছে না। তবে রাজশাহীর তালাইমারীতে ১ একর জমির ওপরে একটি আধুনিক কিলখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা চালু হলে আশা করি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’

সার্বিক বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক অপূর্ব অধিকারী প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘জনবল সঙ্কটের কারণে যথা সময়ে সব কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভিযোগ পেলেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে গিয়ে স্বল্প সময়ের ঘটনাগুলো ধরা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে প্রায়ই ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জনসচেতনার জন্য খুব শিগগিরই একটি বিলবোর্ড বসানো হবে।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের গতকাল মঙ্গলবার বিকালে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এ কাজটি মূলত সিটি করপোরেশনের। তারা চাইলেই আমি ম্যাজিস্ট্রেট দেব। কিন্তু রাজশাহীতে কোনো ধরনের ভেজাল বা অবৈধ কর্মকান্ড চলতে দেয়া হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist