আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সবচেয়ে বড় কার্পেট...
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমেদ স্কয়ারে নির্মিত হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিউলিপ কার্পেট। বিভিন্ন রঙের প্রায় ৫৬৫ হাজার টিউলিপ দিয়ে ৭৩৪ বর্গমিটার আয়তনের এই আকর্ষণীয় কার্পেটটি তৈরি করা হয়। ইস্তাম্বুল সিটি করপোরেশন ঐতিহাসিক সুলতান স্কয়ারে ১৩তম টিউলিপ উৎসব উপলক্ষে এই কার্পেটটি তৈরি করে। কেন তৈরি করা হয় ৫৬৫ হাজার টিউলিপ দিয়ে?
৩৩০ খ্রিস্টাব্দে রোমান স¤্রাট কনস্টান্টিন বসফরাস প্রণালির উপকূলে প্রতিষ্ঠা করেন কনস্টান্টিনোপল শহর। ৩৯৫ সালে রোমান সা¤্রাজ্য দু’ভাগ হলে পূর্ব রোমান সা¤্রাজ্যের নাম হয় বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য, যার রাজধানী হয় কনস্টান্টিনোপল। পশ্চিমে রোমের পতন হলেও পূর্বে রোমান সাম্রাজ্যের ধারক হিসেবে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতাকাতলে টিকে ছিল কনস্টান্টিনোপল। কনস্টান্টিনোপল অনেকবার শত্রুদের আক্রমণের শিকার হলেও এগারো শতাব্দীর ইতিহাসে মাত্র একবারই এ শহর জয় করা সম্ভব হয়েছিল। প্রায় ত্রিকোনাকার এ শহরের উত্তরে বসফরাস প্রণালির অংশ গোল্ডেন হর্ন, পূর্বে বসফরাস প্রণালির মূল অংশ এবং দক্ষিণে মারমারা সাগর। এ ছাড়াও রয়েছে শহরকে ঘিরে রাখা অসংখ্য নগর প্রতিরক্ষা দেয়াল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে থিওডেসিয়ান দেয়াল, যা প্রায় অজেয় এক নগর প্রতিরক্ষা দেয়াল। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই নিরাপত্তা পেয়ে যেত কনস্টান্টিনোপল। মুসলিমরাও বেশ কয়েকবার এ শহর বিজয়ের চেষ্টা করেন, কিন্তু তাদের আক্রমণ থেমে গিয়েছিল শহরের প্রাচীরের কাছেই।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ সিংহাসনে সমাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে ইস্তাম্বুলের বিজয়ের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি দুই লাখ সৈন্যের অংশগ্রহণে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। ১৪৫৪ সালের ৬ এপ্রিল, সুলতান ফাতিহ মাহমুদ মুসলমানদের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই রক্তপাত যাতে না হয় সে জন্য তিনি বাইজান্টাইন সম্রাটকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু বাইজান্টাইনগণ এটাকে গ্রহণ না করে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অবস্থা প্রতিকূল দেখে সুলতান ফাতিহও সেনাবাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ দেন।
২৯ মে প্রাচীরগুলোকে ভেঙে ইস্তাম্বুলের বিজয় নিশ্চিত করেন মুসলিমরা। বাইজান্টাইনের প্রাচীরে সর্বপ্রথম ইসলামের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এভাবে একটি যুগের পতনের মধ্য দিয়ে নব যুগের সূচনা করেন সেনাপতি সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর ইস্তাম্বুল বিজয়ের ৫৬৫তম বিজয়বার্ষিকীটি ফ্রেমে বন্দি করে রাখতেই মূলত তৈরি করা হয় বিভিন্ন রঙের ৫৬৫ হাজার টিউলিপ কার্পেট। রঙিন টিউলিপ দিয়ে শহরের রাস্তাঘাট অটোমান সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদ, টপকাপি প্রাসাদ ও বিভিন্ন পার্ক হয়ে ওঠে টিউলিপের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। টিউলিপের প্রতি তুর্কিদের এই আগ্রহ অটোমান সা¤্রাজ্যের সময় থেকেই। ইতিহাস অনুযায়ী টিউলিপের উৎস তুরস্ক এবং জাতীয় ফুল হিসেবে সুপরিচিত। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় ব্যাপকভাবে টিউলিপের চাষ হতো, তারপর ইউরোপে তা ছড়িয়ে পড়ে। টিউলিপের বৈজ্ঞানিক নামটি তুর্কি থেকে আসা এবং অর্থ হচ্ছে, মুসলিমদের মাথার মুকুট। রাজপ্রাসাদ ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপত্যে ও প্রসাধনে টিউলিপের ছবি ব্যবহার করেন তুর্কিরা। অটোমান সাম্রাজ্যে টিউলিপ ছিল সাজানো গালিচার প্রধান আলঙ্কারিক প্যাটার্ন। পাশাপাশি তুরস্কের অনেক গান ও কবিতায় টিউলিপ ব্যাপক পরিচিত। এই টিউলিপ দেখার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক ইতিহাসসমৃদ্ধ প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুলে ভিড় করেন।
"