কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
হাওরে ধানের বাম্পার ফলন পোষাবে গতবারের ক্ষতি
কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নতুন ধান কাটা। এ বছর তুলনামূলক ধানের ফলন অনেক বেশি হওয়ায় গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। তবে সব ধান ঘরে তুলতে আরো কয়েকটা দিন অনুকূল আবহাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন এই অঞ্চলের কৃষিজীবীরা। একই সঙ্গে ধানের ন্যায্য দাম পেতে চান তারা। গত বছর অকাল বন্যা ভাসিয়ে নিয়েছিল কৃষকের কষ্টে বোনা স্বপ্নের ধান। তখন ছিল শুধু কৃষকের কান্না আর হাহাকার। তবে প্রকৃতি এবার দুই হাত ভরে দান করেছে কৃষককে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনারাঙা পাকা ধান। তা দেখে কষ্টের সেই দিনগুলোর কথা ভুলে আবারো নতুন স্বপ্ন দেখছেন তারা। ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে হাওরের পর হাওর।
ইটনার ইরাবিরা হাওরের কৃষক মহির উদ্দিনের চোখমুখে আনন্দের ছাপ। তিনি বলেন, গতবার ৫০০ (২০ শতাংশে এক কাঠা) কাঠা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। এবার চাষ করেছি ১২০০ কাঠা জমিতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কম করে হলেও ১২ হাজার মণ ধান পাব। কিন্তু গত বছর কোনো ধান তুলতে পারেননি তিনি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমার মতো অনেক কৃষকই বেশি জমিতে ধান চাষ করেছেন এবার।
ইটনা উপজেলার বিস্তৃত হাওরের বিভিন্ন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গত বছর আগাম বন্যায় তাদের সব ধান পানিতে ডুবে যায়। তাই এবার বোরো-২৮ ধান রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তারা। শতকরা ৯৫ ভাগ ধান এরই মধ্যে পেকে যাওয়াতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রকৃতির অবস্থা এখনো ভালো আছে। আরো ১০-১৫ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার শতভাগ ধান কেটে নিয়ে যেতে পারার ব্যাপারে আশাবাদী কৃষক।
কৃষক আরো জানান, ধানের বাম্পার ফলন যেমন হয়েছে তেমনি যদি ন্যায্য মূল্য পাওয়া না যায় তাহলে কৃষককে লোকসান গুনতে হবে। তাই হাওরের কৃষককে জীবন-জীবিকা রক্ষার্থে সরকারকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে ধান। তাই দাম নিয়েও স্বস্তিতে রয়েছেন কৃষক। তারা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত এ দামটাই যদি তারা পান তাহলেই খুশি হবেন।
ইটনা ও মিঠামইন এলাকার সমাজসেবক ও ভূমি মালিক সুরঞ্জন ঘোষ জানান, তার জমিতেও এবার ভালো ফলন হয়েছে। আর মাত্র ১০ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ধান কৃষকের গোলায় ওঠবে। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এবার ধানের দাম ভালো আশা করি এলাকার কৃষিজীবীরা এবার গতবারের ক্ষতি পোষাতে পারবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে কিশোরগঞ্জে। প্রতিকূলতা জয় করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধানের ফলন হয়েছে। গত বছরের বন্যার পর সব সময় কৃষকের পাশে ছিল কৃষি বিভাগ। সার ও বীজ থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রণোদনা কৃষকের হাতে পৌঁছানো হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৮২ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে তার চেয়েও ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে।’
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে নতুন করে বহু বাঁধ নির্মাণ করেছে। এর সুফল পেয়েছেন এলাকার কৃষক।
"