পাঠান সোহাগ

  ২০ মার্চ, ২০১৮

হাসপাতালে নেই লন্ড্রিপ্ল্যান্ট

কাপড় ধোয়া হচ্ছে যত্রতত্র জীবাণু নিয়ে শঙ্কা

দেশের সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই লন্ড্রিপ্ল্যান্ট নেই। মাত্র দুটি সরকারি হাসপাতালে থাকলেও সেগুলো নষ্ট। ফলে নানা রোগব্যাধির জীবাণুযুক্ত হাসপাতালের কাপড়চোপড় ধোয়া হচ্ছে সাধারণভাবে যততত্র। যে প্রক্রিয়ায় বিছানাপত্র পরিষ্কার করছে তাতে জীবাণুমুক্ত হচ্ছে না। বরং ছড়াচ্ছে নানা রকম সংক্রামকব্যাধি। জিবাণুুযুক্ত বিছনাপত্র সাধারণ কাপড়-চোপড়ের মতোই ধোয়া হচ্ছে। মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মনীতি।

দেশের সরকারি-বেসরকারি দুই একটি হাসপাতালে লন্ড্রিপ্ল্যান্ট মেশিন থাকলেও তা অকেজো। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, অর্থপেডিকস ও ক্যানসার ইনস্টিটিউিটে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। সংক্রামক রোগব্যাধি ছড়ায় এমন কয়েকটি হাসপাতালের মধ্যে টিবি, সংক্রামকব্যাধি, কুষ্ঠরোগ নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কোনো লন্ড্রিপ্ল্যান্ট কিংবা জনবল কোনোটিই নেই। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যমে বিছানাপত্র পরিষ্কার করানো হচ্ছে।

হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত রোগীর বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মশারি ও কম্বলসহ চিকিৎসক-নার্সদের অ্যাপ্রোন, তোয়ালে বাইরে থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধোলাই করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও আসল কাজই হচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে বিছানাপত্র প্রতি মাসে তিন থেকে ছয় বার পরিষ্কার করা হয়। এই সব বিছানাপত্রের প্রতি পিছ ৯ টাকা থেকে ১৩ টাকা দিতে হয়। সে হিসাবে প্রতিটি হাসপাতালে তিন লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর বছরে ৩৫ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গিয়ে জানা যায়, এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার সময় একটি লন্ড্রিপ্ল্যান্ট মেশিন কেনা হয়েছিল। তা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। একবার মেরামত করা হয়েছিল। তারপর আরার নষ্ট হলে তার আর মেরামত করা হয়নি। এ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ডি এ পি) মো.মাহমুদুজ্জামান বলেন, ‘লন্ড্রিপ্ল্যান্ট মেশিনসহ প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২৫ কোটি টাকা বাজেট পাশ হয়েছিল। লন্ড্রিপ্ল্যান্ট মেশিন বসানোর জন্য জায়গা সংকুলন না হওয়ায় মেশিনটি কেনা হয়নি। নতুন ভবন হলে সেন্ট্রাল স্টেরিলাইজেশন ডিপার্টমেন্ট (সিএসএসডি) ইউনিট করা হবে। তখন সকল সুযোগ সুবিধা থাকবে। এবং নিজস্ব প্ল্যান্টে বিছানাপত্র পরিষ্কার করা হবে।’ অন্যদিকে ক্যানসার হাসপাতালের প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি লন্ড্রিপ্ল্যান্ট মেশিন থাকলেও অপারেটরের অভাবে তা বন্ধ। পাশেই ৬০০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ঠিকাদারী শ্রমিক দিয়েই খোলা মাঠে রোগী ও চিকিৎসকদের পোশাক পরিষ্কার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কাজ অন্যদের দিয়ে করায়। এতে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। রোগীর মলমূত্র, পুঁজ আর রক্তমাখা কাপড়-চোপড় কোনোমতে পরিষ্কার করে খোলা জায়গায় ধুলাবালি আর নোংরা পরিবেশে শুকানো হয়। শতভাগ জীবাণুমুক্ত না করেই পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুরের একটি লন্ড্রিপ্ল্যান্টে ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিছানাপত্র পরিষ্কার করে। ওই প্রতিষ্ঠানের অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেশিন অনেক দামি। মাঝে মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তখন সাধারণ কাপড় চোপরের মতোই ডিটারজেন্ট, হুইল পাউডার, সোডা ব্যবহার করা হয়। বেশি রক্ত ও ময়লা লাগলে সেদ্ধ করা হয়। ভবনের ছাদ, দেয়াল, ঘাসের ওপর টানিয়ে শুকানো হয়।

কুষ্ঠরোগ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. সোহেল রানা বলেন, ‘কুষ্ঠ হাসপাতালে রোগী কম। টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে। হাসপাতালেরই একজন পুরাতন গরিব রোগী এখানে থেকে (বর্তমানে সুস্থ) পরিষ্কার করেন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজি জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা হাসপাতালের পরিচালকাই দেখেন। তাদের গাফিলতি থাকতে পারে। অধিদফতর শুধু অর্থ বরাদ্দ ও মেশিন কিনে দেয়। মাঝে মধ্যে পরিদর্শনে গিয়ে দেখে আসেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সারাদেশের প্রায় ২৪ হাজার হাসপাতালের নজরদারি করা কঠিন। অনেক সময় যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে মেশিনও নষ্ট হয়। হাসপাতালগুলোতে লন্ড্রিপ্ল্যান্টসহ বিভিন্ন মেশিন মেরামত করা হবে। নতুন কিছু মেশিন কেনা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরবরাহ করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist