আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮

ট্রাম্পের উল্টাপাল্টা কথায় অবাক সিআইএ কর্মকর্তারা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে মার্কিন সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাইকেল ওলফের লেখা ‘ফায়ার এন্ড ফিউরি : ইনসাইড দি ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ নামের বইটি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। বইটিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে-পরে গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর কড়া সমালোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে দায়িত্ব গ্রহণের এক দিন পরই তিনি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু সে সময় ট্রাম্পের করা বিভিন্ন উল্টাপাল্টা বক্তব্যে হতবাক হন কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার এন্ড ফিউরি : ইনসাইড দি ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ বইতে এ তথ্য উঠে এসেছে। লেখক মাইকেল ওলফ তার বইয়ে ‘ডে ওয়ান’ অধ্যায়টি মূলত লিখেছেন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান ও সিআইএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে।

ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী হয়ে ওঠেন জামাই জ্যারেড কুশনার। ওই সময়ে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরা প্রায়ই কুশনারকে তাদের উদ্বেগের কথা জানাতে থাকেন। তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন এই ভেবে যে, ট্রাম্প কার বিরুদ্ধাচরণ করছেন সেটা বুঝতে পারছেন না। জাতীয় পর্যায়ের এক রিপাবলিকান নেতা কুশনারকে বলেন, গণমাধ্যম, রিপাবলিকান পার্টি, কংগ্রেসম্যান এবং গোয়েন্দা এজেন্সির সঙ্গে ট্রাম্পের দুর্ব্যবহার করা ঠিক হবে না। গোয়েন্দাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে তারাও পাল্টা কাজ করবে; যেভাবে আমলা ও গোয়েন্দারা প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। বারবার কুশানরকে বলা হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট যেন একটু সংযমী হন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও গোয়েন্দাদের টার্গেট করতে থাকেন। বইতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বিপজ্জনকভাবেই গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় কুশনার উপলব্ধি করেন যে, নতুন প্রশাসনের প্রথম কাজ হবে সিআইএর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা। দায়িত্ব গ্রহণের পর দিন ২১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সিআইএর কর্মকর্তাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন কুশনার। সতর্কভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছিল ট্রাম্পের বক্তব্য। কিন্তু এজেন্সির প্রায় ৩০০ কর্মকর্তার সামনে অদ্ভুত, উল্টাপাল্টা বক্তব্য দেন ট্রাম্প। লেখক মাইকেল ওলফ লিখেছেন, কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে এ ধরনের অদ্ভুত বক্তব্য আগে কখনো শোনা যায়নি।

ট্রাম্প বলেন, ওয়েস্ট পয়েন্ট (যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক একাডেমি) সম্পর্কে আমি অনেক জানি। শিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে আমার বিশ্বাস ও আগ্রহ প্রবল। এমআইটিতে আমার একজন অধ্যাপক চাচা রয়েছেন। তিনি ৩৫ বছর ধরে সেখানে শিক্ষকতা করছেন। সে অনেক চমৎকার কাজ করে চলেছেন। তখন তারা প্রশ্ন করেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কি একজন মেধাবী মানুষ? জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমাকে বিশ্বাস করুন, আমি একজন ‘স্মার্ট’ মানুষ। এ সময় কর্মকর্তাদের মধ্যে মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যাকে কিছু দিনের মধ্যেই সিআইএর প্রধান করেন। তিনিসহ সবাই এ কথায় হতভম্ব হন।

ট্রাম্প বলেন, আমি নিজেকে যুবক মনে করি। নিজেকে ৩০, ৩৫-৩৯ বছর বয়সি মনে করি। এ কথা শুনে একজন প্রশ্ন করেন, আপনি কী একজন যুবক? জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি তাই মনে করি। তরুণ থাকা অবস্থায় আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে জিতেছি, আমরা যুদ্ধে জিতেছি। একটি কথা মনে পড়ছে, একজন শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনোদিন কোনো যুদ্ধে হারেনি। তবে এর পর থেকে মনে হয়েছে, আমরা কিছুই জয় করতে পারিনি। সবার মনে রাখা দরকার যে, আমি সব সময় বলি আমাদের তেল ধরে রাখতে হবে। এই কথার পর হতবাক হওয়া সিআইএর এক কর্মকর্তা ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, তেলের ওপর কার নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত? জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি কখনো ইরাকের ভক্ত ছিলাম না, কখনো সে দেশে যেতেও চাইনি। কিন্তু আমরা সেখানে যখন গেছি এবং ভুলটা বুঝেছি তখন আমি বলেছি তেলের ওপর দখল রাখতে হবে। এখন এটা আমি বলছি অর্থনৈতিক কারণে। এ সময় তিনি মাইক পম্পেওর দিকে তাকিয়ে বলেন, যদি তেল আমাদের দখলে থাকে তবে আইসিস থাকবে না। এই তেল বিক্রি করে তারা অর্থ জোগাড় করছে।

তিনি সিআইএর কর্মকর্তাদের বলেন, আমি কেন প্রথমেই আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি? কারণ আমি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে অসৎ মানুষ। ট্রাম্প বলেন, আমি যখন ভাষণ দিয়েছি তখন, ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ ছিল। অথচ গণমাধ্যমে সেখানে কোনো মানুষই দাঁড়িয়ে ছিল না। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আমরা মাত্র আড়াই লাখ লোককে জড়ো করতে সমর্থ হয়েছি। এটা মিথ্যা। ট্রাম্প বলেন, টাইম ম্যাগাজিনে এক বছরে ১৫ বার আমার ছবি প্রচ্ছদে ছাপা হয়েছে। আমার মনে হয় না, কেউ এই রেকর্ড ভাঙতে পারবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প মাইক পম্পেওর মত জানতে চাইলে তিনি দুর্বল কণ্ঠে বলেন ‘না’।

বইয়ের এই অধ্যায়ে লেখক আরো বলেছেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান মোটেও উপভোগ করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আশা করেছিলেন, অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণ এবং ছন্দময় হবে। সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাবে। বড় বড় তারকায় মুখরিত থাকবে অনুষ্ঠানস্থল। কিন্তু তা হয়নি। এমনকি শপথ অনুষ্ঠানের শেষ দিকে আয়োজিত কনসার্টে প্রথম সারির কোনো তারকা না থাকায় চরম ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। এর আগে ওয়াশিংটনে অতিথিদের থাকার হোটেলের পরিবেশ নিয়েও বিরক্ত ছিলেন ট্রাম্প। এমনকি সেদিন তিনি স্ত্রী মেলানিয়ার সঙ্গে ঝগড়া করেন বলে বইতে উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে মেলানিয়া কেঁদেছিলেন। শপথের আগে ট্রাম্প বিশ্বাস করতেন যে, ওবামা ও তার প্রশাসন তার সঙ্গে খুবই অসম্মানজনক আচরণ করেছে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ চেহারা নিয়েই শপথ অনুষ্ঠানে যান ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের পর ১৬ মিনিটের একটি ভাষণ দেন ট্রাম্প। ভাষণের পর তিনি বারবার বলছিলেন, কেউ আজকের ভাষণের কথা ভুলবে না। যদিও তখন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এই ভাষণকে যা-তা বলে মন্তব্য করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist