নরসিংদী প্রতিনিধি

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮

শুকনা পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন

নরসিংদীতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে পলিথিন আবৃত বা শুকনা পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন। ভালো মানের চারা উৎপাদন, উৎপাদন খরচ কম ও ফলন বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ধান চাষে কৃষকদের লাভবান করতে এ পদ্ধতি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি বিভাগ জানায়, সনাতন (কাদামাটি) পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন করতে গিয়ে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় হলুদ বর্ণ ধারণ করে নষ্ট হয়ে যায় বেশিরভাগ বীজতলা। সনাতন পদ্ধতির বীজতলার চারা উঠাতে গেলে গুচ্ছ শেকড় ছিঁড়ে যায়। ফলে রোপণের পর গুচ্ছ শেকড় গজাতে অনেক সময় লাগে। শুকনা বীজতলার চারা উঠাতে গেলে গুচ্ছ শেকড়ের কোনো ক্ষতি হয় না। ফলে রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই ফলাফল দেখা যায়।

সনাতন পদ্ধতিতে অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ ও সময় বেশি লাগলেও মানসম্মত ধানের চারা পাওয়া যায় না। ফলে ধানের ফলন হয় তুলনামূলক কম, থাকে আবহাওয়ার বৈরিতাও। এসব সমস্যা সমাধানে ২০১৪ সালে নরসিংদী সদরের চারটি ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে পলিথিন আবৃত বা শুকনো পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন শুরু করে কৃষি বিভাগ। এ পদ্ধতিতে গোবর মিশ্রিত শুকনো মাটিতে ধানের বীজ ছিটিয়ে পলিথিনে ঢেকে দিতে হয়। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার প্রয়োগ ছাড়াই ২৫ থেকে ৩০ দিনে উৎপাদন হয় চারা।

২০১৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা জমিতে ১০ কৃষক এই পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে সফলতা পান। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা রোপণের ফলে বিঘাপ্রতি ৩০ ভাগ ফলন বাড়ে। অন্যদিকে, চারা উৎপাদনে সারের ব্যবহার, শ্রমিক ব্যয় কম হয়। খরচ কম ও লাভবান হওয়ায় সনাতন (কাদা) পদ্ধতি ছেড়ে শুকনা পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে ঝুঁকছেন কৃষক।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বোরো মৌসুমে শুধু নরসিংদী সদর উপজেলায় পাঁচ হেক্টর এবং অন্য চার উপজেলায় দুই হেক্টর শুকনা বীজতলায় ধানের চারা উৎপাদন করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমে শুধু নরসিংদী সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর ও অন্য আরো চার উপজেলায় পাঁচ হেক্টর শুকনা বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষকরা।

নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের ছেরেন্দা গ্রামের কৃষক মহিবুর রহমান বলেন, ‘কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম এক ব্যাগ বীজ থেকে পাঁচ কেজি করে পৃথকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে সনাতন ও শুকনা বীজতলা তৈরি করি। এতে শুকনা বীজতলায় সফলতা বেশি পাওয়ায় সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়েছি।’

পলাশ উপজেলার চরনগরদী এলাকার কৃষক সারোয়ার মোল্লা বলেন, ‘আগে সনাতন পদ্ধতিতে পানি সেচ দিয়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতাম। কিন্তু গত বছর থেকে শুকনা বীজতলায় চারা উৎপাদন করছি। এতে বীজ ও চারা উভয়ই নষ্ট হয় না। বাড়তি কোনো সেচও দিতে হয় না বলে খরচ অনেকাংশে কম।’

নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, এসব চারায় কুশি বেশি হওয়ায় ধানের ফলনও হয় বেশি। এছাড়া রোপণের পর বাতাসে সহজে হেলে পড়ে না, বাড়ে ধানের ফলন। প্রথম বছর আমাদের পরামর্শে মাত্র পাঁচ কেজি ধানবীজ দিয়ে শুকনা বীজতলা তৈরি করেন মহিবুর রহমান নামের এক কৃষক। ফলাফল দেখে নিজেদের উদ্যোগেই তিন বছর ধরে কান্দাইল এলাকায় ধীরে ধীরে শুকনা বীজতলার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।

নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবদুল হাই জানান, শুকনা বীজতলার চারা ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে রোপণ করা সম্ভব হয়। এ জন্য এ পদ্ধতি প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist