প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮

ভালো ঘুমের জন্য মধ্যযুগের মানুষদের সাতটি উপায়

আধুনিক ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। কিন্তু ভালো ঘুমের জন্য পূর্বপুরুষদের আচরণের কি কোনো সম্পর্ক আছে?

আর তাই ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাশা হ্যান্ডলি ইংল্যান্ডের মধ্যযুগের টিউডর সময়ের (১৪৮৫-১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ) ঘুমের ধরন নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় তিনি এমন কিছু কৌশল বা ধরন দেখতে পেয়েছেন, ভালো ঘুমের জন্য যা মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের টিউডর যুগের মানুষরা ব্যবহার করতেন। এ থেকে হয়তো আধুনিক যুগের মানুষরাও ভালো ঘুমের কিছু পরামর্শ পেতে পারেন। বিবিসি টুমরো থেকে অনূদিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ড. হ্যান্ডলি বলছেন, টিউডর সময়ে যদিও মুঠোফোন বা টেলিভিশন ছিল না, কিন্তু তারা এ সময় অন্য কোনো কাজেও সময় দিতেন না। কখনো কখনো বিছানায় বসে বা বিছানার পাশে তারা প্রার্থনা করতেন অথবা শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন।

অনেক সময় নারীরা ঘুমানোর আগে সুঁই-সুতো বা কাঁটা দিয়ে উলের কাপড় বুনতেন। এ ধরনের কাজ মাথাকে ঠান্ডা করে, যা অনেকটা ধ্যানের মতো। ঘুমের সমস্যায় রয়েছেন, এমন অনেককে এ ধরনের কাজের পরামর্শ দিচ্ছেন ঘুম বিজ্ঞানীরা। মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা খারাপ কিছু নয়, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙে যাওয়া ভালো লক্ষণ, যা টিউডর যুগেও ছিল বলে দেখতে পেয়েছেন ড. হ্যান্ডলি। তিনি বলছেন, প্রাক-শিল্প যুগে মানুষজন দুই ভাগে ঘুমাতেন। অনেকে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে উঠে মোমের আলোয় বই পড়তেন বা চাদের আলোয় হাঁটাহাঁটি করতেন। তারা হয়তো রাতে জেগে চার্চের ঘণ্টা শুনতেন। সুতরাং রাত ১টা কি ২টার সময় ঘুম ভেঙে খানিকক্ষণ সজাগ থাকা একেবারে খারাপ কিছু নয়।

ভালো ঘুমের সঙ্গে ভালো খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যযুগেও টিউডররা জানত, তাদের ভালো খাবার কী হওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত খাবার ঘুমের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে। ড. হ্যান্ডলি বলছেন, বিশেষ করে ঘুমের আগে খাবারের বিষয়ে তারা খুব সতর্ক ছিল। তারা এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করত, যা খানিকটা ঠান্ডা ধরনের। বিশেষ করে তারা অনেক শসা খেত। কারো কারো মধ্যে খানিকটা অপিয়াম খাওয়ারও প্রবণতা ছিল।

মধ্যযুগে মানুষদের ব্যক্তিগত শয়নকক্ষের চিন্তা ছিল না। শুধু শয়নকক্ষে ঘুমানোর চিন্তাটি আধুনিক যুগের একটি ব্যাপার। কিন্তু টিউডর যুগে পুরো বাড়িটি ঘুমানোর একটি জায়গা হিসেবে ভাবা হতো। ড. হ্যান্ডলি বলছেন, তারা যেকোনো কক্ষেই ঘুমাতে পারত। হয়তো সেসব কক্ষে ঘুমানো ছাড়াও আরো অনেক কাজ হতো। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে তাদের অত বেশি চিন্তা ছিল না। তারা হয়তো তাদের বিছানা অন্য অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিত। তাতে কখনো কখনো বিপদও ঘটত। তবে ঘুমের জন্য একান্ত বিছানার যে ধারণা, সেটি তাদের ছিল না।

মধ্যযুগের ঘুমের ধরন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ড. হান্ডলি দেখতে পেয়েছেন, তারা পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিল। অনেকে গোলাপের তেল শরীরে মাখিয়ে রাখত। আবার গ্রাম এলাকায় অনেকে বিছানার কাছে বা পায়ের দিকে গরুর শুকনো গোবর বেধে রাখত, যাতে পোকামাকড় তাদের শরীরে না এসে সেদিকে চলে যায়।

আধুনিক যুগের তুলনায় টিউডর যুগের মানুষরা তাদের বিশ্রামের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিল। তারা ঘুমের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় নিত। সারা সব ধরনের কাজ থেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিত এবং শুধু ঘুমের দিকেই মনোযোগ দিত। অনেকে ঘুমের আগে ধ্যানের মাধ্যমে মাথা থেকে সব চিন্তা সরিয়ে দিত। এখন যেমন সব যন্ত্রপাতি বন্ধ করা আর কৃত্রিম আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া ভালো ঘুমের একটি উপায় হতে পারে।

অনেক মানুষ হয়তো রাতের বেলাতেও যখন তাদের ঘুমাতে যাওয়া উচিত, তখন অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে। হয়তো কেউ প্রার্থনা করে, কেউ লেখালেখি করে বা পাবে-রেস্তোরাঁয় সময় কাটায়। কিন্তু এর মাধ্যমে জীবন থেকে ঘুমের জন্য বরাদ্দ গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু হারিয়ে যায়। তাই ড. হ্যান্ডলি পরামর্শ দিচ্ছেন, শিশুরা যেভাবে ঘুমায়, সবার উচিত এই ঘুমের সময়টাকে সেভাবেই ব্যবহার করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist