প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বিবিসির প্রতিবেদন
বাংলাদেশে পুলিশ নিয়ে কেন এত অসন্তোষ
২০১৭ সালে পুলিশি সেবার মাধ্যমে ভালো কাজ করায় ২০১৮ সালের পুলিশ সপ্তাহে ‘আইজিপি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ’ পাচ্ছেন ৩২৯ জন পুলিশ সদস্য। পুলিশ সপ্তাহ শুরুর প্রেক্ষাপটে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে তুলনামূলক অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই সময়ে ডাকাতি, খুন, নারী নির্যাতন, অপহরণের মতো অপরাধের ঘটনার হার কমেছে। আবার ভালো কাজের পুরস্কারস্বরূপ আইজিপি পদকও পাচ্ছেন এবার ৩২৯ জন পুলিশ সদস্য। তারপরও এই পুলিশ বাহিনীকে নিয়েই প্রচ- অসন্তোষ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
পুলিশের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা কেন বদলাচ্ছে নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের কাজ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সেজন্য অল্প কিছু লোকের নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রভাব অনেক বেশি হয়।
তিনি বলেন, কেউ যদি অন্যায়ভাবে আটক হয় তার প্রভাব বেশি থাকে। সামান্যতম বিচ্যুতিও মানুষকে প্রভাবান্বিত করে। সেজন্যই হয়তো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে। অল্প হলেও এর প্রভাব অনেক। পুলিশকে আইনত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার দেওয়া আছে ন্যায়সংগত উপায়ে। কিন্তু সবসময় ন্যায়সংগত উপায়ে সেটা হয় না। অনেক সময় মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা সংগত কারণেই ক্ষুণœ হয় আর সেজন্য মানুষের ক্ষোভ বেশি থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই এত সহজে বিষয়টি মানতে রাজি নন।
ঢাকার একজন বেসরকারি চাকুরে পুলিশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, একটা আতঙ্কের নাম পুলিশ। আস্থার চেয়ে অনাস্থাই বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন তারা নিজেদের জনগণের প্রভু
হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু পুলিশ নিয়ে এ অভিযোগ আর ভীতি খুব ব্যাপক নাকি বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয়? জবাবে আরেক ব্যক্তি বলেন, মাঝে মধ্যে ওনারা দুর্নীতি করে বলেই অনেকে খারাপ বলে, তবে আমরা বিপদে পড়লে তারাই উদ্ধার করবে।
আরো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলেও পুলিশ সম্পর্কে তারা অন রেকর্ড কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দু-একজন অবশ্য বলেছেন, পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু পুলিশ নিয়ে আস্থার ঘাটতি এত ব্যাপক হওয়ার কারণ কি ? জবাবে সংস্থাটি নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ বলপূর্বক অর্থ আদায় বা ঘুষের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত। আমাদের গবেষণায় ৭০ শতাংশ মানুষই বলেছেন ঘুষ না দিলে কোনো সেবাই পাওয়া যাবে না।
তার মতে, এর সঙ্গে রয়েছে পেশাদারিত্বের ঘাটতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার। নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিতে পেশাদারিত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক প্রভাব। তবে পুলিশ সম্পর্কে বহু মানুষের মনে যে অনাস্থা বা ভীতি সেটি কিংবা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ সেটিকে পুলিশ বাহিনী কিভাবে নেয়? তারা কি বিষয়গুলো আদৌ স্বীকার করে বা বিবেচনায় নিয়ে থাকে ?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক সহেলী ফেরদৌস বলেন, অন্য সংস্থা যেভাবেই কাজ করুক মানুষের প্রত্যাশা থাকে পুলিশের নজরে কেন আসেনি। এই যে বিপুল চাহিদা বা প্রত্যাশা পুলিশকে নিয়ে এটি ইতিবাচক। কিন্তু এটি পূরণ না হলেই অনাস্থা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, জনবলের ঘাটতি বা লজিস্টিক সাপোর্ট কম থাকায় সেবা প্রত্যাশিত মাত্রায় না গেলে যে অনাস্থা তৈরি হয় সেটিও বিবেচনায় নেওয়ার মতো বিষয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাড়ছে জনবল, নিরাপত্তা সক্ষমতা।
গঠন করা হয়েছে কয়েকটি বিশেষায়িত ইউনিট, জরুরি সেবার জন্য চালু হয়েছে ট্রিপল নাইন নম্বর, জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বাহিনীটি সক্রিয় হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কিন্তু সেগুলো ঠিক কতটা কাজে এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা খুবিই কম। পুলিশের সংস্কার বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ খসড়া আইন পড়ে আছে। জাতীয় পুলিশ কমিশনের মতো কিছু প্রস্তাব ছিল সেগুলোও হয়নি।
সহেলী ফেরদৌস অবশ্য বলেছেন পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যাতে করে বাহিনীর কেউ অপরাধ বা অনিয়মে জড়িয়ে না পড়ে। তারপরও কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সেটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই।
"