জুবায়ের চৌধুরী

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জমে উঠছে প্রচারাভিযান, বাড়ছে উত্তাপ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জমে উঠছে নির্বাচনী প্রচারাভিযান। ভোট উৎসব-আমেজের সঙ্গে বাড়ছে উত্তাপও। নির্বাচনী প্রচারণা চাঙ্গা হয়ে ওঠার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। আহত হয়েছেন অনেকে। নির্বাচনী প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে ফরিদপুর ও নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এতেই প্রমাণিত হয় বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল।

ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে রাজনীতির ময়দানের উত্তাপ ততই বাড়ছে। নির্বাচনী প্রচারণার চতুর্থ দিন গতকাল দেশের দুটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাবনা-১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদের গাড়িবহরে হামলা, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের বিএনপি জোটের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সেলিমের বাড়ি হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠেছে।

এর আগে গত বুধবার রাজধানীর সদরঘাটে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ভোলা-৩ আসনের প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নেত্রকোনার আটপাড়ায় আওয়ামী লীগের মিছিলে পেট্রল বোমা হামলায় ৭ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলার কেন্দুয়ায় মিছিল বের হলে তাতে বিএনপি প্রার্থী গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে মহাজোট-ঐক্যফ্রন্ট সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপি সভাপতি, সম্পাদকসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৭ জন। এ ছাড়া খুলনায় প্রতিপক্ষের হামলায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা-সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন শতাধিক। সংঘর্ষের পুলিশ রিপোর্ট চেয়েছে ইসি : নির্বাচনী প্রচারণায় তিন জেলায় সংঘটিত সহিংস ঘটনা সম্পর্কে পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলেছে ইসি (নির্বাচন কমিশন)। এজন্য আইজিপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ফরিদপুর ও নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুজন কর্মী মারা গেছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা হয়। আগামী তিন দিনের মধ্যে ঘটনা তিনটি সম্পর্কে পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিব্রত ইসি।

দ্রুত সেনা মোতায়েন চায় ঐক্যফ্রন্ট : ‘পুলিশি হয়রানি, গ্রেফতার ও নির্যাতনরোধে’ এ মুহূর্তেই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি-গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের নেতারা গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে এমন দাবি জানান। এদিকে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে এবং ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও গ্রাম পুলিশ মিলিয়ে ৬ লক্ষাধিক ফোর্স এবারের নির্বাচনে মোতায়েন থাকবে বলেও জানানো হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে।

হামলা-সংঘর্ষ অব্যাহত : নির্বাচনী প্রচারণার চতুর্থ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের দুটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাবনা-১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় প্রার্থী নিজেও আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি ছাড়াও ৪ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের বিএনপি জোটের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সেলিমের বাড়ি হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠেছে। গতকাল দুপুরে রামগঞ্জের পূর্ব করপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, লিফলেট বিতরণে বাধা, মাইক ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গত বুধবার ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাকসহ বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সভাপতি ওসমান গনি শাহজাহান, পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, রূপনগর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরদারকে গ্রেফতার করা হয়।

অন্যদিকে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় নৌকার প্রচার মিছিলে ‘পেট্রল বোমা’ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল।

বাগেরহাট-৪ আসনের মোরেলগঞ্জে নির্বাচনী গণসংযোগকালে সন্ত্রাসী হামলায় ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আবদুল আলীম ও তার তিন কর্মী আহত হয়েছেন। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে নির্বাচনী প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনায় দেড় শতাধিক কর্মী আহত হওয়ার পর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে দুই দল।

নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের হামলায় যুবদল নেতাসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। চাঁদপুরের কচুয়ায় বিএনপি প্রার্থী মোশারফ হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করেছে প্রতিপক্ষ। হামলায় পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও প্রার্থীসহ বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপির নির্বাচনী সমাবেশ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির প্রার্থী শরীফুল আলম, পুলিশের এসআই আহসানসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিপক্ষের হামলায় খুলনা-৩ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও তার ছেলে তানভির হকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন।

গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধে ইসিতে বিএনপির চিঠি : সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতার বন্ধে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে আসে একটি প্রতিনিধিদল।

এর আগে গত মঙ্গলবার অন্তত ১৮ জেলায় নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের অফিস ও বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়, নির্বাচনী মিছিলে হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ১০ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর এ পর্যন্ত সহিংসতায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট বারবার অভিযোগ করে আসছে, তাদের নির্বাচনী কার্যালয় ও প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রচার চলবে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ নির্বাচন,প্রচার,উত্তাপ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close