সন্তানের ওপর নজরদারির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাজ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন তারা কেন এই অন্ধকারের পথে যাচ্ছে। রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ছেলেমেয়েরা যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের পথে না যায়, সেজন্য অভিভাবক-শিক্ষককে বাচ্চাদের ওপর নজরদারির আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জাফর ইকবালের ওপর ছুরি নিয়ে হামলে পড়েন এক যুবক। এতে তার মাথায় রক্তক্ষরণ হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাতে আনা হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকালকে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের একজন শিক্ষক—শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাফর ইকবালকে ছুরি মারা হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে এয়ারফোর্সকে বলে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দিয়ে তাকে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে এসেছি, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তার অবস্থা এখন ভালো।
এই হামলা ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাজ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এই অন্ধত্বে ঢুকে যাচ্ছে কেন? যদিও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলাদেশে কোনোরকম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আমরা চলতে দেব না। এবং মাদকের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায় তারা তো ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তারা মনে করে একটা মানুষকে খুন করলে বুঝি বেহেশতে চলে যাবে। তারা কোনোদিন বেহেশতে যাবে না, তারা দোজখের আগুনে পড়বে। এতে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ, নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। যারা এই ধরনের খুন করেছে, তারা কেউ আজ পর্যন্ত বেহেশতে গেছে কি না, আমার মনে হয় সেই ম্যাসেজটাও পাঠায়নি। যদি একটা মেসেজ পাঠাত, তাহলে বুঝতাম তারা বেহেশতে গেছে।
মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে ছেলেমেয়েদের মুক্ত রাখতে হবে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এর জন্য যা যা করা দরকার, তা সবাইকে করতে হবে। এটা তো সর্বনাশ করে দেয়। আমাদের মেধাবী ছেলেপুলেদের নষ্ট করে দেয়। কাজেই এই ধরনের সর্বনাশা পথে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন না যায়। বিশেষভাবে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে, তার সঙ্গে যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কী করছে—এটা জানতে হবে, এটা দেখতে হবে।
ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সুসম্পর্ক রাখতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়, তাদের কোনো সমস্যা তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে, তাদের পরামর্শ নিতে পারে, সেই ধরনের একটা মানসিক যোগাযোগ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। প্রত্যেক বাবা-মাকে সেভাবে সহনশীল হতে হবে এবং ছেলেমেয়েদের কথা শুনতে হবে। বাচ্চারা যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, তখন একেকটা বয়সে তাদের একক ধরনের রূপ। তাদের সেই মানসিকতাটাকে চিন্তায় রেখে তাদেরকে সেভাবেই ফেইস করতে হবে, সেভাবেই ব্যবহার করতে হবে। হয়ত বা মাঝে মাঝে একটু বেয়াদবি করবে, সহনশীল হতে হবে, বাবা-মাকেই সহনশীল হতে হবে, আস্তে আস্তে বুঝাতে হবে। আর তারা যেন বিপথে না যায়, সেটা দেখতে হবে। আমাদের এত মেধাবী ছেলেপুলে, তারা যেন কখনও বিপথে না যায়, সেটাই আমরা চাই।
পিডিএসও/হেলাল