পার্থ মুখোপাধ্যায় (কলকাতা)

  ০৩ জুলাই, ২০২০

ভারতে স্বাধীনতা দিবসে চালু হচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন

১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন ভারতে তৈরি প্রথম করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন লঞ্চ করা হতে পারে। স্বাধীনতা দিবসেই করোনাভাইরাসের কবল থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিতে চাইছে কেন্দ্র। চলতি সপ্তাহেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করে দিতে নির্দেশ দিয়েছে আইসিএমআর। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপরেই এই ভ্যাকসিনের সাফল্য নির্ভর করবে। কোনও ইনস্টিটিউট এই বিষয়ে সহযোগিতা না করলে তা গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে আইসিএমআর। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত ইনস্টিটিউটগুলিকে নির্দিষ্ট টাইমলাইনের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এই কাজটি করতে বলা হয়েছে আইসিএমআর-এর লেখা চিঠিতে। এদিকে এই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার টপকে গেল। ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৯০৩ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে সংক্রমিত হননি।

ভারতে বানানো করোনার প্রথম টিকা বাজারে আসত‌ে পারে স্বাধীনতা দিবসের মধ্যেই। নাম, কোভ্যাক্সিন। ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বা, বিবিআইএল-এর সহযোগিতায় ওই টিকা বাজারে আনছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা, আইসিএমআর। বাজারে আনার আগে মানুষের উপর প্রয়োগ করে দ‌েখার জন্য ক্লিনিক্যাল বা হিউম্যান ট্রায়ালে দেশের অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আইসিএমআর সুত্রের খবর। গোটা বিশ্বে ইতোমধ্যেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১ কোটিরও বেশি মানুষ। ভারতেও আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও করোনার কোনও টিকা বাজারে আসেনি। বেশ কয়েকটি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রথম দেশীয় করোনা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্য বিশাখাপত্তনম, রোহতক, দিল্লি, পটনা, বেলগাঁও (কর্নাটক), নাগপুর, গোরখপুর, হায়দ্রাবাদ, গোয়া, আর্য নগর, কানপুর ও কাট্টানকুলাথুরের (তামিলনাড়ু) প্রতিষ্ঠানগুলিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে আইসিএমআর সূত্রের খবর।

ঢালাওভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর জন্য দেশের ওই প্রতিষ্ঠানগুলিকে চিঠি দিয়েছে আইসিএমআর। তাতে লেখা হয়েছে, টিকা বানানোর জন্য সার্স-কভ-২ ভাইরাসের স্ট্রোন সংগ্রহ করা হয়েছিল আইসিএমআর-এর অধীনে থাকা পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে। টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর আগে যা যা করণীয় আর ঢালাওভাবে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানোর জন্য যা যা করণীয়, বিবিআইএল-এর সহযোগিতায় সেই সবই করেছে ও করে চলেছে আইসিএমআর।

দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ছ’লক্ষ ২৫ হাজার ৫৪৪ জন। আক্রান্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে মোট মৃত্যু ১৮ হাজার পার করল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৭৯ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ১৮ হাজার ২১৩ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ১৭৮ জনের। রাজধানী দিল্লিতে মৃত্যু ধারাবাহিকভাবে বেড়ে হয়েছে দু’হাজার ৮৬৪। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাটে মারা গিয়েছে এক হাজার ৮৮৬ জন। গত মাসের শেষ দিক থেকে তামিলনাড়ুতেও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে করোনার জেরে প্রাণহানি। যার জেরে তামিলনাড়ুতে মোট মৃত এক হাজার ৩২১ জন। উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশে মৃত্যুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে রাজস্থান, তেলঙ্গানা, কর্নাটক, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পঞ্জাব ও জম্মুকাশ্মীর। ৩০ জানুয়ারি কেরলে দেশের প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর কেটে গেছে পাঁচ মাস। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি রুখে দিয়েছিল কেরল। কিন্তু মহারাষ্ট্রে তা বল্গাহীনভাবেই বেড়েছে। তামিলনাড়ু ও দিল্লিও পাল্লা দিয়ে এক লক্ষের দিকে এগোচ্ছে। দেশের মোট সংক্রমণের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই তিনটি রাজ্য থেকে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভারত,করোনা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close