মিজানুর রহমান নয়ন, সংবাদকর্মী
ক্ষণিকের আনন্দ শেষে স্ব-স্ব কাজে ব্যস্ত আমরা
পৃথিবীর অনেক কিছুই বেঁধে রাখা গেলেও হয়তো বেঁধে রাখা যায় না অপ্রতিরোধ্য সময়। আর সেই মহা মুল্যবান সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় অনেক কিছু, হারিয়ে যায় স্মৃতি বিজরিত সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাঘন, মান-অভিমান সংবলিত কিছু মুহূর্ত।
প্রায় চার দিন ধরে আমরা কয়েকজন ভ্রমণপ্রিয়, আড্ডাবাজ, চা-পাটি আর আনন্দ শিকারী দল ছুটেছিলাম পরিত্যাক্ত অজানা স্থানে। সুন্দর কিছু মুহূর্ত তৈরি করে নিজেরা কিছু উপভোগ করা আর অন্য কাউকে উৎসাহ দেওয়াই ছিলো উদ্দেশ্য। ভ্রমণকালে কখনও মনে হয়নি এই আনন্দ ফুরন্ত, এর অন্তিম আছে। কিন্তু এইটাই আজ বাস্তব যে সন্ধ্যাবেলা আপন নীড়ে পাখি ফেরার মত সত্য, যে সত্য চেষ্টা করলেও আর এই উদ্দেশ্যবিহীন আনন্দময় ভ্রমন তৈরি সহজে বন্ধ হবে না। আজ থেকে আবার নিজ নিজ কর্মস্থানে গন্তব্য সবার, আবার কাজ, আবার একঘেয়েমী, একাকীত্ব বোধ।
গত ১৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টার দিকে ভ্রমনে গিয়েছিলাম আমরা কতিপয় বেকার সকার, সরকারি বেসরকারি কর্মজীবি চাকরীজীবি। জোতমোড়া জয় বাংলা বাজার আলম মন্ডলের ফ্রী ওয়াইফাই চায়ের দোকান থেকে ভ্রমনের শুরুতে গিয়েছিলাম কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান গড়াই নদীর বরুলিয়া বালুর চরে। সন্ধ্যাকালীন পূর্ব মুহূর্তে সবাই মিলে সেলফি তোলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রঙ বেরঙের কথা আর হাসাহাসির মাঝে আনন্দ খোঁজা। বাড়ির পাশে শুকনা নদীর উলুবন আর সাদা বালু যে সবার কোমল হৃদয়ে আনন্দ দানে আকৃষ্ট করবে তা ছিল অজানা।
তবে সূর্য ডোবার সাথে সাথে বাস্তবে হারিয়ে গেলেও কৃত্রিম উপায়ে ক্যামেরাবন্দী আছে অনেকের কাছে। এর পরে বাইনা হল চা পান করতে হবে তাও আবার ৫ কিঃমিঃ দূরে খোকসা উপজেলার হিজলাবট নামক বাজারে। বাজারে গিয়ে দেখি চায়ের দোকান বন্ধ। অনেকে হতাশ, নানা গুঞ্জন শোনা যায়, চা পান করা কী হবে না ? এর মাঝে শুরু হয়ে গেল সবুজ চাচার কুকুরের বাচ্চাদের সাথে ছোট বেলার স্মৃতি বিজরিত খেলা। ছোট ছোট কুকুরের বাচ্ছা না কি তার খুব আনন্দ জাগায়। অনেকেই অবাক হলেন ডিজিটাল যুগে প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য। এরপর রাতে যদুবয়রা পুলিশ ক্যাম্পে হৈ হুল্লা আর আনন্দ চললো অনেক রাত। এইভাবে প্রথম দিনের বিদায় ।
দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সবাই পরিবার পরিজনদের সময় দিয়ে আবার জড়ো হলাম জোতমোড়া জয় বাংলা বাজার আলম মন্ডলের ফ্রী ওয়াইফাই চায়ের দোকানে। চা আর আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে সবার জলপনা কল্পনা কী করা যায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। ঠিক আছে মিলন ভাই বলল, আজ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। সাথে সাথে দুই জন করে আট দলের জুটি হয়ে গেল। চল যদুবয়রা পুলিশ ক্যাম্পে ব্যাডমিন্টন খেলতে, জিহাদ ভাইয়ের মুড়ি মাখানো খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে শেষ হয়ে গেল ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগীতা। বিজয়ী দল আরব ও নয়ন। খেলা শেষে আগামীকাল শনিবার কি দিয়ে শুরু হবে দিন।
ঠিক আছে ক্রিকেট খেলতে হবে তাও আবার জুনিয়ার বনাম সিনিয়ার। শুরু হল শনিবার সকাল ৯টায় সবার শৈশব স্মৃতি বিজরিত যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জুনিয়ার সিনিয়র ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচ। খেলার বিশেষ আকর্ষণ বিশ বছর পর ক্রিকেট খেলোয়াড় মিলন ভাই। প্রবীন খেলোয়ার মিলন ভাইয়ের দুদান্ত বোলিং এবং এ.এস.আই আনোয়ার ভাইয়ের ব্যাটিং এ ২৭ রানে জুনিয়ারদের পরাজিত করে বিজয়ী সিনিয়ার।
শেষে দিন রোববার প্রথমে সকাল ১১টায় বাঁশগ্রাম ডিগ্রী কলেজ মাঠে এম.পি রউফ সাহেবের মায়ের প্রথম মৃত্যবার্ষিকীতে উপস্থিত হলার। তারপর ৫ কিঃমিঃ দূরে পান্টি বিজয় মেলায় গিয়েছিলাম । মেলা মানেই আলাদা একটা জিনিস, ভিন্ন রকম আনন্দ উল্লাস। কেউ বলে পুতুল নাচ না দেখলে মেলা জমে না। সব কিছু শেষে রাত ১২ টায় বাড়ি ফেরা ।
বিছানায় শত চেষ্টায় চোখের পাতা মেলে না। হয়তো কাল আর সবার সাথে দেখা হবে না। আলম মন্ডলের চায়ের দোকানে হবে না কোনও আনন্দ উল্লাস। এখন কিছু স্মৃতি মণিকোঠায় নাড়া দেবে। ভাবনার জগতে এ ভ্রমন কখনও আনন্দ দেবে । আবার কখনও অনেক বেশি যন্ত্রণা দেবে যখন সবাই স্ব স্ব কাজে ব্যস্ত সময় কাটবে। অল্প সময়ে স্বল্প পরিসরে এই মোটর সাইকেল ভ্রমনে ছিলেন, খালেক স্যার, জিয়াদুল ইসলাম মিলন, খোকন ভাই, পারভেজ, মাসুম মাজেদ, কামাল ভাই, রাসু, বকুল ভাই, আরব আলী রঞ্জু, আনিছ মাষ্টার, মাইকেল রঞ্জু, লিটন ভাই, সবুজ চাচা, সংগীত শিল্পী সালেহ, আর আমি সবার ক্ষুদ্র সাংবাদিক নয়ন।
পিডিএসও/রিহাব