দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ০১ আগস্ট, ২০১৯

মানুষ এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে

ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছে দেশের কোটি কোটি মানুষ। রাজধানী ছাড়া দেশের কোথাও আশঙ্কাজনকভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে না পড়লেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। আফ্রিকা থেকে আসা এডিস মশা বাংলাদেশের জনমানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছে নিশ্চিতভাবে।

এ বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২৮ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোয় এখন ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। তবে এটিই ডেঙ্গু আতঙ্কের মূল কারণ নয়। আক্রান্তরা যে অসহনীয় যন্ত্রণায় ভোগেন, তা আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। মতলববাজদের গুজব সৃষ্টিও জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। ডেঙ্গু প্রতিরোধে র‌্যালি, সভা, সেমিনার, বক্তব্যের ছড়াছড়ি থাকলেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না এই ঘাতক রোগ। ডেঙ্গুতে যারা প্রাণ হারাচ্ছে তার এক বড় অংশ শিশু।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা এমনিতেই ঝুঁকিতে থাকে। এবার ডেঙ্গুর ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আসায় শরীরে জ্বর অনুভূত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও দুর্নীতি ও অসততার অভিযোগও কম নয়। মশা নিধনের ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মানহীন ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মশা নিধনে সবার আগে দরকার মশা উৎপাদনকারী ডোবা ও নালাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সুফল নিশ্চিত হচ্ছে না। নাগরিক সচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাজধানী ও আশপাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন ডোবা-নালাগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হলে মশার প্রজনন প্রক্রিয়ায় আঘাত হানা সম্ভব হবে। মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে হলে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।

প্রতি বছরই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ঘটে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তবে এবার সংক্রমণটি একটু বেশি। এর প্রধান কারণ মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের চূড়ান্ত অদক্ষতা ও অবহেলা। ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মশা মারা মেয়রদ্বয়ের কাজ নয় অবশ্যই। তবে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ অপরিচ্ছন্ন মহানগরীর নালা-নর্দমা-পয়োবর্জ্য-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশা-মাছির ওষুধ ছিটানো দুই সিটির অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি ও শিথিলতা দেখা যায়। প্রতিদিনই রাজধানীর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই বলে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শরীর ব্যথাসহ জ্বরে আক্রান্ত হলেই সতর্ক ও সাবধান হতে হবে, অবহেলা না করে। খেতে হবে প্রচুর পানি, খাবার স্যালাইন। সর্বোপরি মশা নিরোধে মশারি তো আছেই। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আবশ্যক।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে কী করণীয়? প্রথমত. বর্তমানে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে এডিস মশা নিস্তেজ হচ্ছে; কিন্তু মরছে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এডিস মশা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এজন্য বর্তমানের ওষুধ ছিটাতে হলে এর ডোজ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত. অনতিবিলম্বে কার্যকরী ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের গাফিলতি করা যাবে না। তৃতীয়ত. জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিকে আরো জোরদার করতে হবে। সিটি করপোরেশনের ওষুধের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, প্রত্যেক নাগরিকের উচিত হবে নিজ নিজ বাড়িঘরের আশপাশে এডিসের প্রজনন হতে পারে এমন সব ব্রিডিং গ্রাউন্ডকে ধ্বংস করা। দিনের বেলায় অন্তত শিশুদের ঘুমের সময় মশারি ব্যবহার করাও সব অভিভাবকের দায়িত্ব।

ঢাকাবাসী তথা ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলাগুলোর মানুষ চায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কথা না বাড়িয়ে কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন। কত অল্প সময়ের মধ্যে মশা মারা যায়, সেজন্য জোরদার লড়াই চালাতে হবে। ইতোমধ্যে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসার যেন কোনো ত্রুটি না হয়। আর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর করার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন বাগাড়ম্বর এবং দায়িত্ব এড়ানোর সামান্যতম সুযোগ নেই।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আতঙ্ক,ডেঙ্গু,মতামত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close