সম্পাদকীয়
নির্মাণসামগ্রীর বাজার চড়া
বাজার চড়া শব্দদ্বয় যেন অনেকটা গেরস্থালি জিনিসপত্রের মতো। জন্মলগ্ন থেকে শুনতে শুনতে আমাদের কানের পর্দার অবস্থা নাজুক হয়ে পড়লেও শব্দদ্বয়ের শরীরে কোনো মরিচা পড়েনি। চকচকে তলোয়ারের মতো এখনো সে ধারালো। প্রতিনিয়ত সেই ধারালো তলোয়ারের আঘাতে কত মানুষ যে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বাজারদর চড়ছেই—এটাই বাস্তবতা।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে হঠাৎ বেড়ে গেছে নির্মাণসামগ্রীর দাম। চড়া দামে এসব সামগ্রী কিনতে হচ্ছে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে এই চড়া দামের কারণে। ফলে তলোয়ারের আঘাত মালিকদের যতটা না লেগেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন নির্মাণশ্রমিকরা। মানবেতর জীবনে প্রবেশ করতে হয়েছে অনেক শ্রমিক পরিবারকে।
নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে তিনটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। এ তিনটি পণ্যই হচ্ছে এ শিল্পের ক্ষেত্রে অপরিহার্য উপাদান। আর উপাদান তিনটির একটি রড, দ্বিতীয়টি এঙ্গেল ও তৃতীয়টির নাম সিমেন্ট। যার একটিকে বাদ দিয়ে এ শিল্পকে চলমান রাখা সম্ভব নয়। মূল্যবৃদ্ধির হার স্তরভেদে ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ যে রড ও এঙ্গেলের বাজারমূল্য ছিল টনপ্রতি ৫৫ হাজার টাকা, মাত্র চার মাসের ব্যবধানে তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার টাকায়। সমান তালে বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
স্বল্প সময়ের মধ্যে এ মূল্যবৃদ্ধি খোদ সরকারকেও করেছে উদ্বিগ্ন। সরকার উদ্বিগ্ন হলেও শিল্পমালিকরা এ মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন নন। উদ্বিগ্ন ক্রেতাপক্ষ। একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, দেশের বাজারে নিত্য অপরিহার্যে কোনো একটি পণ্যের মূল্য বাড়লে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। আবার অনেকের মতে, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায়। ইতোমধ্যে মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবে আবাসন ব্যবসা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। বেকার হচ্ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
সামনে রমজান মাস। এমনিতে এ মাস এলেই ব্যবসায়ীদের মনে একটা নেতিবাচক আনন্দ খেলা করে। পাপ-পুণ্য বিবেচনায় না রেখে, রমজানের ত্যাগ ও মহিমাকে পরিহার করে তারা মানুষকে কষ্টের সমুদ্রে টেনে আনতে বাধ্য করে। সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো সমাজের কাঁধে চেপে বসে এবং সমাজ তা কলুর বলদের মতো কাঁধে নিয়ে টানতে থাকে।
আমরা মনে করি, এর একটা পরিসমাপ্তিতে পৌঁছানো খুবই জরুরি। কিন্তু কে নেবে এর দায়িত্বভার? একজন ইমানদার মুসলমান হিসেবে ব্যবসায়ীদেরই উচিত এ দায়িত্ব গ্রহণ করা। এতে সমাধান হতে পারে জলবৎতরলং। অন্যথায় এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই।
পিডিএসও/তাজ