রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
সত্যিকারের পশু হাসপাতাল!
হাসপাতালের ভেতরে যেখানে-সেখানে শুয়ে আছে বেওয়ারিশ কুকুর। হাসপাতালের আঙিনা, বারান্দা, অফিসরুম—সর্বত্রই কুকুরের অবাধ বিচরণ। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটি যেন কুকুরেরই দখলে। কুকুরের কারণে গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে। কুকুরের অভয়ারণ্যের কারণে এখানে আসা লোকজন এটার নাম দিয়েছে ‘সত্যিকারের পশু হাসপাতাল’। এছাড়া এখানে গবাদিপশুর চিকিৎসা চলে নোংরা-আবর্জনাময় স্থানে। এতে চিকিৎসা দেওয়ার কয়েকদিন পরই আবার অসুস্থ হয়ে যায় সেগুলো। এমন অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।
স্থানীয় এবং ভুক্তভোগীরা জানায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল নানা রকম অনিয়মের কারখানা। এখানকার কর্মচারীরা ঠিকমতো অফিস করেন না। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সাঈদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি খামার পরিদর্শন বা অসুস্থ পশুর চিকিৎসা করেন না। সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। হাসপাতালের ওষুধ কোথায় যাচ্ছে—এ নিয়ে খামারিদের ক্ষোভের অন্ত নেই। হাসপাতালে টাকা ছাড়া চলে না গবাদিপশুর চিকিৎসা। টাকা না দিলে গবাদিপশুর মালিকদের বিনা চিকিৎসায় ফিরতে হয় এবং হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ-পথ্য না পেয়ে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে চড়া মূল্যে ওষুধ কিনতে হয়। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গবাদিপশুর মালিকরা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়েছে রামগোপালপুরের আব্দুল করিমের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হাসপাতালে এসে গরুর প্রজনন টিকা দিয়েছি। ৩০ টাকা মূল্যের টিকা ১০০ টাকা রেখেছে।’ দেখা গেছে, হাসপাতালের আঙিনায় কুকুরের অবাধ বিচরণ। হাসপাতালের বারান্দায় একাধিক কুকুর শুয়ে থাকায় গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন হাসপাতালে ঢুকতে পারছে না। হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সাঈদ সরকারকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসরুমের সামনে কয়েকটি ঘুমন্ত কুকুর দেখে বোঝা গেল, বেশ কিছুক্ষণ ধরেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনি।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নোংরা-আবর্জনার মাঝে গবাদিপশুগুলোকে দাঁড় করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থ ষাঁড়কে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা আবু সাঈদ বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর কোনো ডাক্তার পাইনি। অবশেষে ড্রেসার ফজলুল হক নোংরা-আবর্জনার মধ্যে নিয়ে আমার ষাঁড়টাকে চিকিৎসা করলেন।’ নোংরা-আবর্জনা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ড্রেসার ফজলুল হক জানান, কিছুদিন আগে এখানে বালু ও সুরকি ফেলা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে পানি জমে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিবেশে চিকিৎসা করলে পশু আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে কিনা, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তো একটু থাকেই।
চিকিৎসা নিতে আসা পশুর মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি হাসপাতালের ভেতরে কিভাবে কুকুর অবাধে বিচরণ করে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাছাড়া এসব কুকুরকে কোনো প্রকার প্রতিষেধক টিকা বা ইনজেকশনও বোধ হয় দেওয়া হয়নি। তাই যেকোনো সময় কাউকে কামড়ে দিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ রামগোপালপুরের রতন মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে কুকুর থাকায় আমার গাভী দৌড়ে পালাতে চাইছে। রশি টেনেও ভেতরে নিতে পারছি না।’
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, ময়নাতদন্তের মুরগি খেতে কুকুরগুলো হাসপাতালে আসে। এসব কুকুর বিপজ্জনক নয়। এরও বেশ কিছুক্ষণ পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মিলল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সাঈদ সরকারের। অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার অফিসরুমের সামনে একটি কুকুর সারাক্ষণ শুয়ে পাহারা দেয়। এটা দেখতে আমার ভালোই লাগে। আর পশুচিকিৎসার স্থান থেকে আবর্জনা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ ওষুধ না দেওয়া কিংবা দাম বেশি রাখা এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
পিডিএসও/হেলাল