আলেক্সান্ডার পুশকিন ও তার কবিতা
অনুবাদ মুম রহমান
আলেক্সান্দার সের্গেইভ পুশকিন (১৭৯৯-১৮৩৭) রোমান্টিক যুগের রুশ কবি, নাট্যকার ও উপন্যাসিক। এই মহান কবিকে আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক বলা হয়। পনেরো বছর বয়সে তার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় এবং কলেজে থাকাকালেই কবি হিসেবে সবার নজর কাড়েন। জারের রাজনৈতিক পুলিশরা তার ওপরে নজর রাখত। এই সময়ই বিখ্যাত নাটক বসি গুডোনভ রচনা করেন। তার উপন্যাস ইউজিন অনেজিন কাব্যে লেখা। তার স্ত্রীকে ফুসলানোর চেষ্টা করলে পুশকিন একজন ফরাসি কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত হন এবং মারাত্মক আহত হন।
বন্ধুত্ব
বন্ধুত্ব কী? মাতলামির পরের দলাদলি,
অত্যাচারের পর বেহুদা প্যাঁচাল,
অহংকার, জড়তার অদল বদল
কিংবা সমর্থনের তিক্ত লজ্জা।
আমি শেকলে বাঁধা
আমি শেকলে বাঁধা ও তাজা গোলাপ,
এবং তবুও লজ্জিত নই এসব রক্ষীবাহিনীতে;
একটি বুলবুলি, যেমন গভীর বিজয়চিহ্নে
পালকের রাজা এই বনের কবিদের,
এক গৌরবান্বিত এবং চারু গোলাপের ওপর,
এক মধুর বন্ধনে- দীর্ঘতর বাঁচে
আর মৃদু সুরে তারই জন্যে গান গায়
এক কামুক রাত্রির চাদরে।
লিলির প্রতি
লিলি, লিলি! আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি
হতাশায় আর আশাহীনতার অভিশাপে।
আমি ছিন্নভিন্ন আর আমি মরে যাচ্ছি,
আমার আত্মা তার দ্যুতি হারাচ্ছে,
কিন্তু আমার ভালোবাসা কোনো করুণার আহ্বান করে না
তুমি আমাকে বেচারাই ভাবতে পারো।
হেসে যাও, তুমি সুন্দর
এমনকি যখন সহানুভূতিহীন তখনো।
ওগাভেরার প্রতি আকস্মিক অনুভূতি
তোমার সামনে আমি নীরবে আন্দোলিত হই।
আমি এত উদ্বিগ্ন হই, যখন তুমি আমার কাছে আসো,
বৃথাই, আমি তোমার চলার পথে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি
আমি নিশ্চিত আমি কোনোদিনই বলব না
আমি স্বাধীনমনে কী কী কল্পনা করছিলাম।
স্বপ্ন
বেশি দিন আগে নয়, এক মনোহর স্বপ্নে
আমি নিজেকে দেখি-এক রাজা মুকুট আর প্রাচুর্যে ভরপুর;
আমি এই স্বপ্নের প্রেমে পড়ে গেলাম, মনে হলো,
আর আমার হৃদয় আনন্দে নাচতে লাগল।
আমি তীব্র আবেগে গান গাইলাম তোমার মনোরম কোলের কাছে।
স্বপ্ন, তুমি আমার সুখকে কেন প্রলম্বিত করো না
চিরকালের তরে?
কিন্তু ঈশ্বর তার সকল অনুগ্রহ থেকে আমাকে বঞ্চিত করেননি;
আমি কেবল আমার স্বপ্নের রাজত্ব হারিয়েছি।
একটি ছোট্ট পাখি
আমি রেখে এসেছি এক দূরতম জমিনে
প্রাচীন স্থানীয় কৃত্য আর বস্তুনিচয়ের দেহ
আমি মুক্ত করেছি এক ছোট্ট পাখিকে সানন্দে
বসন্ত উদযাপনের অজুহাতে।
এখন আমি অনুশোচনা থেকে মুক্ত
আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ
অন্তত, তার একটি সৃষ্টিকে পেরেছি
আমি এই পৃথিবীতেই স্বাধীনতা দিয়েছি।
"