মতিন বৈরাগী
শফাত শাহের লাঠি অন্যরকম মুগ্ধতা
‘ছোটো’পা তোর নকশিকাঁথা বুনতে বুনতে নামল এসে/শীতের শিশির/তবু তো তোর শিল্পকলা শেষ হলো না, শেষ হলো না!’
‘শীতের তোড়ে কাঁপছি আমি, কাঁপছে আজো করুণ স্বদেশ/লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একটি কাঁথা বুনলি আপা/তবু তো তোর শিল্পকলা শেষ হলো না, শেষ হলো না!’
[ছোটো’পা তোর নকশিকাঁথা]
কবি প্রসঙ্গে বইয়ের ফ্লাপে উল্লেখ রয়েছে- ‘সাংস্কৃতিক-নৈসর্গিক অতীতকাতরতা, বর্তমানের স্বদেশ ও করপোরেট বিশ্বসভ্যতার রক্তক্ষরণ, আর্তচিৎকার এবং ভবিষ্যতের শীতল সন্দিগ্ধস্বপ্নকে বিন্দুবদ্ধ করেছেন কবি মোহাম্মদ সাদিক তার কবিতায়’। আর কবি তার ভূমিকাপত্রে বিনয়ের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন- ‘কবিতা বিষয়ে সবিনয়ে বলি, কবিতা লিখতে লিখতে বুঝেছি, আমি কবিতা না লিখলেও সভ্যতার কোনো ক্ষতি হতো না। কবিতা নিয়ে আমার অহঙ্কার করার কিছুই নেই। তবু ভালোবাসার এইসব পঙক্তি আমার গোপন বেদনা ও আনন্দাবেগকে সতত জাগিয়ে রাখে।’ যেমন তিনি বলেন, ‘ছোট’পা তোর নকশিকাঁথা বুনতে বুনতে নামল এসে/শীতের শিশির’ তখন তিনি না লিখলে এমন লিরিকসমৃদ্ধ পঙক্তিটি কে লিখত? কে লিখত শিল্পের অনন্ত যা শেষ হওয়ার নয়, যা শেষ হয় না, যা শেষ হয়েও মনে হয় আরো কিছু বাকি থেকে গেল। এভাবে নয়, আরো ঘন আরো হৃদয় ছুঁঁয়ে হৃদিতে প্রবেশ করেনি, তা হয়নি এবং আশ্চর্যবোধক দিয়ে তাকে ‘ইনফিনিট’ করে দেওয়া। বিস্ময়কে সূত্রবদ্ধ করে নয়, তার মাত্রাকে আরো বিস্ময়ের দিকে মুখ করে দেওয়া। আর তারপর নানাভাবে আঁকা, সেলাই করা নকশিকাঁথা- যা ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংকুলান করে বয়নে প্রস্ফুটনে সভ্যতার রূপ-রসকে উৎকীর্ণ করে তাকে শাণিত করা। সে হলো জীবনযাপন বোধ, যাকে প্রতিমুহূর্তে নবায়িত করে নিতে হয়। কিন্তু একজনম তো আর দীর্ঘসময় নয়, হাড়ে হাড়ে শীত লাগে, জড়তা আসে, স্থবিরতা উঁকি দেয়, বুনন শেষ হয় না। থেকে যায় অসমাপ্ত আর তাই তিনি বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একটি কাঁথা বুনলি আপা/তবু তো তোর শিল্পকলা শেষ হলো না, শেষ হলো না।’ এই হলো জীবনÑ যার প্রত্যাশা ছিল মানবিক সুন্দরে, যার ধ্যান মানুষের মনের গভীরে। হবে হবে হবে একদিন, তবু হয় না। কত আয়োজন, কত ক্রনন্দন, কত উচ্ছ্বাস, কত রক্তক্ষয়, কত শ্রম ঘাম- তবু সে বদলায় না প্রত্যাশার দিকে। বদলায় উল্টো দিকে, উল্টো রথে তার অধিষ্ঠান এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের এই প্রাণন্তকর কষ্ট-দুঃখ জীবনদাহ পিষ্ট হয়ে হয়ে প্রবেশ করে অসমাপ্তিতে। আশা থেকে যায়, শেষ একদিন হবে। কিন্তু কবি সেই আশাটির কথা জানেন, সেই মানবযাত্রার ইতিহাসটাও। তাই তিনি বলেন, ‘ধীর গতিতে হাতের কাঁটা যাচ্ছে বুনে সময় থেকে সময় নিয়ে/সব সকালের সব বিকেলের চিহ্নি আঁকা’। অর্থাৎ সভ্যতার মানবিক চাকা ধীরগতিলগ্ন থাকলেও কাঁটা বুনে যাচ্ছে আশা, বুনে যাচ্ছে ইতিহাসের গৌরব। বুনে যাচ্ছে গতায়মান সময়ের দলিল নিবিড় মনোনিবদ্ধতায়। আর অপেক্ষা ‘ঢাকবে কবে আমার শরীর?’ এই প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে পাঠক থেকে পাঠকের হৃদয়াকুতিতে।
একদিন এক অনুষ্ঠানে গিয়ে শুনেছিলাম, কবি মোহম্মদ সাদিক কোনো একটা বিষয়ে উপস্থিতিকে বলছেন। বেশ গোছানো বলা। কিন্তু বলবার মধ্যে একটা ভিন্নরকম বৈশিষ্ট ছিল। হ্যাঁচড়-প্যাঁচড় ছিল না। একেই কান্ট বলেছিলেন সম্মোহন। [যদিও সবচেয়ে বড় সম্মোহনের বক্তৃতাটা আমরা ৭ মার্চ রেসকোর্সে শুনেছিলাম।] এর আগে আমি তাকে চিনতাম না, কবি বলায় একটু বেশি আগ্রহ ছিল শুনতে, আর যখন তিনি তার বলা শেষ করে নিচে এলেন তখন তার সঙ্গে প্রথম সামনাসামনি পরিচয়, তিনি আমাকে চিনতেন তাই কোনো সংকট হয়নি। আমি বললাম, কী? ছাত্ররাজনীতির নেতা ছিলেন নাকি? বক্তৃতাটাতো ভারি সুন্দর করে দিয়েছেন। একসময় নুরে আলম সিদ্দিকীর বক্তৃতা শুনতাম, বায়তুল মোকাররমের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করত মাহমুদুর রহমান মান্না এবং একেবারে শেষের দিকে আখতারুজ্জামান। আজ একটা ভালো বক্তৃতাও শুনি না। কবি সাদিকের বলার স্টাইলটা অনেকটা তেমন, যা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি বললেন, না। বলে ফেললাম আরকি। আর কয়েক দিন আগে তার কাব্য ‘শফাত শাহের লাঠি’ হাতে এসে পৌঁছল। কারণ, আমি পড়তে চেয়েছিলাম আমার এক অনুজের কাছে, সেও কবি।
‘কাব্য হলো মনুষ্য সমাজের মাতৃভাষা অকর্ষিত ভূমি কর্ষিত কৃষিক্ষেত্র থেকে পুরাতন, লেখার আকার থেকেও পুরাতন; আবার গান কথার থেকেও পুরাতন, বিনিময় প্রথা বাণিজ্যিক প্রথা থেকে বেশি পুরাতন। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যা বলেছেন, তা কাব্যাকারে বলেছেন।’ কাব্যের সংজ্ঞা নানাভাবে নানা দার্শনিক ও নন্দনতত্ত্ববিদরা প্রদান করেছেন। প্রত্যেকের ভিন্নতায় তা এখন বিশাল এক ভা-ার হয়ে আমাদের কাছে উপস্থিত। কেন কাব্য নিয়ে এত কথা, কেন কাব্য নানা সঙ্কোচন সম্প্রসারণ এবং বিবর্তনের পরেও নানা রহস্য নিয়ে পাঠকের কাছে আজও সমান উপস্থিত এবং আদৃত সে এক প্রশ্ন। কী আছে কবিতায়, কী সেই অন্তর্নিহিত রহস্য যে সংজ্ঞায়নের পর সংজ্ঞায়নে নতুন শরীরে মানুষের আবেগপ্রাচুর্যে আবার সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এবং ভাবনার তল থেকে বহুতলে বিস্তৃত হয়ে ক্রমাগত গ্রহণ করছে আকার আকাক্সক্ষার অবয়ব। কী গদ্যে, কী শিল্পের অন্য কলায়, মনোজগতের অস্থিরতায় কাব্যই যেন অতৃপ্তির তৃপ্তি হয়ে বারবার বেজে উঠছে, প্রশমিত করছে ঝঙ্কার তুলছে। যেন খোলা জানালার একটুখানি অচেনা বাতাস স্পর্শ করে দেহ, দহনদাহ। আবার নন্দনতত্ত্ববিদ বামগার্টেন মনে করতেন, ‘নিকৃষ্টতর জ্ঞানেন্দ্রিয়ের ঊর্ধŸতমসীমাটুকুই হলো কবিতার সীমারেখা।’
শিল্প-সাহিত্য মানবজীবনে তার প্রকাশে নিছক একটা প্রকাশ হয়ে আলোড়িত করে না মনকে। বিষাদে হর্ষে নিদানে নিগ্রহে সে হয়ে ওঠে আশা ও আশ্রয় নির্মাণের ক্ষেত্রভূমি। ‘ওরে ভীরু তোর উপরে নেই ভুবনের ভার’ যখন উচ্চারিত হয় তখন দিশা নেই। তবু যেন এক দিশা হৃদয়ভূমিকে একটা আশ্রয় দেয়, যেন দৃশ্যমান করে আস্থার অস্তিত্ব এবং ভেতরবাণী বারবার অনুরণিত হয়ে ভেতর আমিকে বলবান করে। আবার যখন উচ্চারিত হয় ‘নিচে পড়ে আছিস কেরে কাঁদিস কেন, লজ্জা ডোরে আপনারে বাঁধিস কেন’Ñ সেও হয়ে ওঠে জাগবার ভাববার অবস্থা অবস্থান বদলাবার মন্ত্র। আবার যখন ধ্বনিত হয়- ‘লক্ষ লক্ষ প্রাণের দাম অনেক দিয়েছি উজার গ্রাম’ তখনও এক উদ্দীপনা স্ফূলিঙ্গ হয়ে ফোটে থেমে থাকা রক্তস্রোতে। এমনি অজস্র পঙক্তি কোটি কোটি পঙক্তিমালা কবে থেকে রচিত হয়ে মনোজগতে সুন্দরকে নির্মাণ করে চলেছে, আর তা যেন কখনো পুরনো নয়। প্রতিবারই নতুন হয়ে নতুন উচ্চারণে অভয় দিচ্ছে, আনন্দ দিচ্ছে, সাহস দিচ্ছে যুদ্ধের মযদানে। ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধŸ গগনে বাজে মাদল’ গানটি ড্রামে বাজিয়ে কেউ হেঁটে গেলে যেকোনো নুয়েপড়া মানুষও আলোড়িত হয়। অথচ, সে কবিতা কখনো পড়ে না, কবিতার ইতিহাসও জানে না। শিল্প এমনই। তার শক্তি পরিমাপের সীমাকেও ছড়িয়ে পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে এবং আকস্মিকতায় মানুষকে এতটাই আন্দোলিত করতে পারে। ইতালির ফ্লোরেন্সের গির্জায় দুটি দরজার কাজ করেছিলেন জগতখ্যাত শিল্পী গিবের্তি। এই দরজা যখন জনসম্মুখে খুলে দেওয়া হয়, তখন ফ্লোরেন্সবাসীর জয়ধ্বনি আর থামে না। তারা বলল, ‘হ্যাঁ এই হলো আমাদের অহঙ্কার।’ একজন বিখ্যাত ভাস্কর বললেন, ‘এ তো স্বর্গের দরজা’, ‘গেটস অব প্যারাডাইস’ এই দরজায় ওলড টেস্টামেন্টের দশটি উপাখ্যান আছে।’
‘শফাত শাহের লাঠি’ একটা বিশেষ কিছুকে শনাক্ত করে। প্রতীক হিসেবে এই লাঠি অবলম্বন হতে পারে, নির্ভরতার উপায় হতে পারে, আত্ম-উৎপাদনের সহায়ক হতে পারে। হতে পারে ন্যায়, শাসন এবং নির্দেশক। সেই লাঠি ‘যখন শফাত শাহের হয়’ তখন সে বিশেষ হয়ে ওঠে। এই বিশেষ মানবজীবনের বহুকাক্সক্ষার অবলম্বন হয়। কারণ, আধ্যাত্মঘনিষ্ট মানুষেরা তাদের লাঠিকে কেবল একটা প্রতীক হিসেবে ব্যবহারে যুক্ত করে রাখলেও সে কেবল একটা লাঠিই নয়, সে হলো নির্দেশ। পীর ফকির মুরশিদ যারা দৃশ্যমান জগতের বস্তু দৃশ্যান্তরীত রূপের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। এই লাঠি কবিতাও হতে পারে, বাণীও হতে পারে, অনুসন্ধানের এবং সত্যমিথ্যের মাঝে দাঁড়ানো নির্দেশকও হতে পারে। বাংলার বাউল সমাজ এবং ভারতীয় তান্ত্রিক ও যোগীরাও লাঠি ব্যবহার করেছেন। গৌতমেরও সঙ্গী ছিল লাঠি। সে কেবল তাদের ভরভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে নয়, সে মানুষের জীবনরহস্যেরও প্রতীক হয়ে পবিত্রতা পেয়েছে। মুসা তার লাঠি দিয়ে সমুদ্র বিভাজন ঘটিয়েছিলেন, আর সোলায়মান তার লাঠিতে ভর দিয়ে মন্দির নির্মাণকার্য তদারক করেছিলেন। সিংহাসনে বসে নয়, লাঠিতে ভর দিয়ে। সে কারণে লাঠি দৃঢ়তা প্রত্যয় আকাক্সক্ষার তরিকা উৎসারণরীতিতে বিশেষ হয়ে আছে। কবি তার নামের কবিতায় বলেন, ‘যখন তোমার ঘরে কেউ এসে আশ্রয় প্রার্থনা করে/তুমি শফাত শাহের লাঠি দিয়ে তাকে তো তাড়াও/যখন তোমার সাথে কিছুই থাকে না/তুমি শফাত শাহের লাঠি দিয়ে তাকেই প্রার্থনা কর।’
ঘর বহু অর্থের দ্যোতকে ব্যাঞ্জনাময় একটি শব্দ প্রকাশের নানা উপাত্ত। সাধারণত ঘর যে অর্থ বহন করে এই কবিতায় তার ভিন্ন অর্থের ইঙ্গিত বর্তমান। সাধারণ ঘর আশ্রয়, আশ্রয় চিরকাল মানুষের আরাধনা, সে জগতে, ভাবজগতে, অস্তিত্বে এবং অস্তিত্বহীনতার পরেও। আবার ঘর একটা সীমাকে এবং সীমাহীনতারও নির্দেশক। দেহ কাঠামোও একটা ঘর বলে মরমীরা মানে, তারা এর স্বরূপ নানাভাবে উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছেন। এই ঘরের বাসিন্দা যে সে এক ‘বড় আমি’, এই বড় আমি ভাবনায় আন্দোলিত হয়। অর্থাৎ আত্মা উন্মুখ হয়ে থাকে নিয়মকে ছুঁঁতে, অসীমকে জানতে, তার স্বরূপকে নির্ণয় করতে। তার বসবাস ঘরের মধ্যে। কিন্তু সেই ঘরে যদি বিপরীত অবস্থান করে, অর্থাৎ অসঙ্গত সঙ্গ উপস্থিত হয় তখন তাকে তাড়াতে লাঠি লাগে, আর শফাত সাহেবের লাঠি, মানে সেই পবিত্র আত্মার উপস্থিতিকে নিশ্চিত করা যায় শাসন থেকে, নির্ভরতা থেকে। আবার যখন ঘর নতুনকে গ্রহণ করতে চায় অর্থাৎ শুদ্ধাত্মার উপস্থিতিকে তখনো ওই লাঠি প্রয়োজন। কারণ, সে পরিমাপক আর সে-ই পারে সত্যকে নির্বাচন করতে অর্থাৎ মনশুদ্ধির জন্য যে নিয়ামক দরকার হয় তা শিখতে গুরুর দরকার হয়। গুরুই হচ্ছেন সত্য অনুসন্ধানের নির্ণায়ক লাঠি। আর সে জিজ্ঞেস করে, ‘ও মিয়া এত গান লিখলা, এত গান গাইলা, বাপের নাম কী, মুরশিদ কিডা।’ এখানেই বাউল জিজ্ঞাসা। কারণ, তারা আধ্যাত্মজীবনবোধে তন্ময়। তাদের অনুসন্ধান চলমান সমাজের রীতি ভেতরে নয়, আত্মজিজ্ঞাসায়। ‘কোথায় তোমার ঘরবাড়ি, কী তোমার ঠাঁই ঠিকানা, কে তোমার পিতা, কোন গায়ে সাকিন’- এসব প্রশ্নগুলো সমাজে চলমান রয়েছে কিন্তু মরমীবাদীদের কাছে এর অর্থ অন্য অর্থে দ্যোতিত হয়। আর একদিন সাধক তার প্রাপ্তি তার অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে হাসিল করে। তখন বলে, ‘পাইছি পাইছি, এত দিনে আমি তারে পাইছি গো ননদি’ এই উপমাটি চলমানতায় আমরা শুনি বটে কিন্তু বাউলের উচ্চারণে সে সেই সম অর্থ বহন করে না। করে আশেক আর মাশুকের প্রেমের ভেতরে। সুফিবাদী দর্শনের একটা ইতিহাস আছে, আমাদের উদ্দেশ্য নেই সেই আলোচনায় যাবার।
তবে, কবি মোহাম্মদ সাদিক যে ভিন্ন মাত্রার কবি এবং তার কবিতায় রয়েছে আধ্যাত্মজীবনবোধের অনুসন্ধান ও তিনি নিজে যে একজন বাউলভাবলগ্ন মানুষ এবং তার অন্তরজগতে এক সুন্দর প্রতিমুহূর্তে আলো-আঁধারের ছায়া ফেলে- তা তার প্রত্যেকটা কবিতায় যুক্ত রয়েছে। তার ভাষাটি চমৎকার নিরাভারণ কিন্তু সরল অলঙ্কারে সুসজ্জিত। আত্মদর্শনোন্মুখ এই কবির কবিতাগুলো ধরে ধরে মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটলে দেখা যাবেÑ নিজেই যেন কখন এক তন্ময়ী জগতদৃশ্যে সম্পৃক্ত হয়ে গেছি। কত সুন্দর সুন্দর পঙক্তি আছে শতাধিক এই কাব্যে, কত চমৎকার ভাষা বুননে, তা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি পঙক্তির ভেতরের সারসত্তায়।
"