প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
রাখাইনে উগ্র বৌদ্ধদের রোহিঙ্গা বিরোধী বিক্ষোভ
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সে দেশের সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৌদ্ধ উগ্রবাদীরা। এক প্রতিবাদ বিক্ষোভ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেওয়া সু চির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেবে না বলে হুশিয়ার দিয়েছে তারা।
রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী বিক্ষোভের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে অং সান সু চি বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া ‘মানুষের’ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুইবার এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সফল অতীতের ওপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি। এর কয়েক দিনের মাথায় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানায়, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ১০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ি আলজাজিরাকে জানান, যাদের পরিচয় মিয়ানমার সরকারের নথিতে থাকবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শত শত উগ্রবাদী। ২০১২ সালের সহিংসতার সময় এই সিত্তি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয় হাজার হাজার রোহিঙ্গা। তার আগ পর্যন্ত এই শহরটি ছিল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। বিক্ষোভের আয়োজনকারীদের একজন অং হুতাই। তিনি বলেন, মিয়ানমারের যেকোনো নাগরিককে তারা রাখাইনে স্বাগত জানাবেন। তবে নাগরিক হওয়ার অধিকার যাদের নেই, তাদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার নব্বই দশকের যে চুক্তিকে উপজীব্য করতে চাইছে, তাতে একটুও ভরসা দেখছেন না শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। অতীতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রাখাইনে ফিরে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বারের মতো আসা এমন রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা শুনলেই অতীত স্মৃতিতে ‘বিভীষিকার চিহ্ন’ দেখছেন। জাতিগত নিধনযজ্ঞ আর মানবতাবিরোধী অপরাধের দুঃস্বপ্ন নিয়ে পুড়ে যাওয়া গ্রামে ফিরে কী করবেন, এমন প্রশ্ন অনেকের মনে।
চুক্তিকে উপজীব্য করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা জানিয়েছে, তাতে যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বৈধ প্রমাণপত্র হাজিরের শর্ত আছে। পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ফেলে স্রেফ জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন-বৈধ-অবৈধ পরের প্রশ্ন, কাগজপত্র কোথায় পাবে তারা?
কেবল রোহিঙ্গারা নয়, এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নীতিতে নিজেদের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছে।
"