শুভ দে, মাভাবিপ্রবি

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী যেভাবে হলেন সফল উদ্যোক্তা

সময়টা ছিল অক্টোবর ২০২০, মহামারি করোনার প্রকোপ চলছিল বিশ্ব জুড়ে। বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাসও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফ অন্তর চট্টগ্রামে নিজ বাসস্থানে ফিরে যান। তবে ক্লাস-পরীক্ষা চলমান ছিল অনলাইনে। এতকিছুর মাঝেও বাসায় বসে বেশ অলস সময় পার করছিলেন আশরাফ অন্তর। এক দিন এলাকায় তার স্কুলবন্ধু শাহেদকে আশরাফ অন্তর বলেন, আমিতো টিউশন করাই না, এমন কিছু একটা করলে কেমন হয়- যাতে হাত খরচও হলো, সঙ্গে এই মহামারিকালীনও কাজে লাগানো গেল। বলাবাহুল্য, চট্টগ্রামের টেরিবাজার নামের এলাকায় তার বন্ধু শাহেদের পারিবারিক লেডিস থান কাপড়ের (রো-মেটেরিয়াল) ব্যবসা ছিল আগে থেকেই, যেই কথা সেই কাজ! তারা খুঁজতে লাগলেন এমন কী করা যায়, যা করলে প্রবলেম সলভিং, কাস্টমার স্যাটিসফেকশন ও উপযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু লকডাউন ছিল স্বভাবতই দোকানপাট বা দর্জি শপগুলো বন্ধ থাকত। এই সময় হঠাৎ এক দিন মোবাইলে কল আসে- একটি গায়ে হলুদ হবে, চট্টগ্রাম শহর এলাকার বাইরে মেয়েদের গায়ে হলুদের থান কাপড় এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি লাগবে, দিতে পারবেন কি না, তাও (অনলাইন ম্যাথডে অর্ডার হবে) অর্ডার অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে দিতে হবে! তারা সাহস নিয়ে অর্ডার নিয়ে নিলেন এবং সাকসেসফুলি লোকাল থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরিতে ডিজাইন ও রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী মজুরির ভিত্তিতে কাজটি করিয়ে দ্রুততার সঙ্গে হোম ডেলিভারি করেন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।

এরপরেই মাথায় এলো- এইভাবে রেডিমেইড ও কাস্টমাইজড পাঞ্জাবি বানালে কেমন হয়? কি ব্র্যান্ড নেইম সিলেক্ট করা যায়, যার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন? দুজনের মাথায় এলো ‘সেই রঙ’, যা মূলত গায়ে হলুদ, বিয়ে, উৎসবে পুরোনো সেই দিনকে নবরূপে রিপ্রেজেন্ট করবে। সেই থেকেই পথচলা অনলাইন ওয়্যারহাউজভিত্তিক কাস্টমাইজড মেনস অ্যাপারেল হাউজ ব্র্যান্ড ‘সেই রঙের’।

এই তিন বছরের পথচলায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাদের মনে হয়, পড়াশোনার পাশাপাশি একটি উদীয়মান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে পরিচালনা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং, তবে তারা হাল ছাড়েননি। পড়াশোনার পাঠ থেকে প্রাপ্ত তত্ত্বীয় জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগিয়ে একটি অভূতপূর্ব মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী ম্যানেজ করেই সর্বোচ্চ আউটপুট আনার চেষ্টা করেছেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে সফলতার পাল্লা ভারী। এই তিন বছরে প্রায় ৩০ লাখের বেশি টাকার ব্যবসা করেছেন। বর্তমানে তাদের একটি ওয়্যার হাউজ ও একটি দুই লাইনের চুক্তিভিত্তিক ফ্যাক্টরি রয়েছে, যার মাধ্যমে ‘সেই রঙ’-কে একটি পরিপূর্ণ ব্র্যান্ডে পরিণত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।

আশরাফ অন্তর বর্তমানে ‘সেই রঙ’ ব্র্যান্ডটির হেড অফ বিজনেস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন এবং তার বন্ধু মো. শাহেদ ইকবাল হেড অফ প্রোডাকশন হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। সেই রঙের আকাশচুম্বী লক্ষ্য হলো, এমন একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো, যাতে তা মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে, নিত্যনতুন পণ্য ও পরিষেবার মাধ্যমে অ্যাপারেল সেক্টরে দেশ এবং বহির্বিশ্বে শক্ত একটি অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।

‘সেই রঙের’ মতো দেশের প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচিত সমাজ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করা। ‘সেই রঙ’ এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা ঈদুল ফিতরে চেষ্টা করেন এতিম বাচ্চাদের মাঝে পাঞ্জাবি বিতরণ করতে। এ ছাড়া ইফতার আয়োজনের সঙ্গী হয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার (চট্টগ্রামের হেফজ ও এতিমখানায়), কখনো অটিজমে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক আয়োজনে স্পন্সর করা (ন্যাশনাল হেলথ ভিডিওগ্রাফি কনটেস্ট- অর্গানাইজড পার্টনার মেডিজোন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ও সংগঠনগুলোর (ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজের ফুটবল টুর্নামেন্ট ও রোটাশিয়া বাংলাদেশ ২০২৩’-সহ রোটারেক্ট ক্লাবের দেশব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগী আয়োজনে) প্রোগামে স্পন্সরিং করা। বর্তমানে ‘সেই রঙের’ একটি ওয়্যার হাউজ চট্টগ্রামের দুদু মিয়া মার্কেট টেরিবাজারে অবস্থিত ও চুক্তিভিত্তিক কোলাবোরেশান শপ রয়েছে পাঁচটি, যা রাঙামাটির বনরুপা, রাজশাহীর সাহেববাজার, কুমিল্লার লাকসাম, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রামের টেরিবাজার, ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close