প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ জুন, ২০২২

আসামে নজিরবিহীন বন্যা

গত সপ্তাহে মারা গেছে ১৮ জন

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের প্রত্যন্ত এক গ্রাম উদিয়ানা। সেই গ্রামে বাস করেন রনজু চৌধুরী। তিনি জানান, পুরো রাজ্যটিই এখন ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত। বিরতিহীন বৃষ্টিপাতের কারণে খুব দ্রুতই রাস্তাঘাট সব পানিতে ডুবে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পানি যখন ঘরে পৌঁছাল, তখন অন্ধকারের মধ্যেই নিজেদের নিরাপদে রাখতে একসঙ্গে অবস্থান করছিলেন। দুদিন ধরে নিজের বাড়িতেই আটকা তারা, যেটি এখন সাগরের পানির মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের রূপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চারদিকে বন্যার পানি। খাবার পানি নেই বললেই চলে। খাবারও ফুরিয়ে আসছে। এখন শুনতে পাচ্ছি বন্যার পানি আরো বাড়ছে। নজিরবিহীন বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে আসামকে। গ্রাম, খেত-খামার, বাড়িঘর- সব পানির নিচে।

কর্তৃপক্ষের হিসেবে রাজ্যের ৩৫টি জেলার মধ্যে ৩৩টিই বন্যায় আক্রান্ত। মারা গেছে ৩৪ জন আর ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ।

ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রতিবেশী মেঘালয় রাজ্যেও, যেখানে গত সপ্তাহে মারা গেছে ১৮ জন।

আসামেই সরকার ১১৪৭টি রিলিফ ক্যাম্প খুলেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিপর্যয়ের মাত্রা এত বেশি যে তাদের কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি রেসকিউ ক্যাম্পগুলার অবস্থাও নড়বড়ে।

‘ক্যাম্পে খাবারের পানি নেই। ছেলের জ্বর কিন্তু চিকিৎসকের কাছে নিতে পারছি না,’ বলছিলেন হুসনা বেগম নামে উদিয়ানার আরেকজন নারী। গত বুধবার বাড়িতে পানি আসার থেকে তিনি দুই সন্তানসহ একটি প্লাস্টিকের তাঁবুতে অবস্থান করছেন। ‘এমন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। জীবনেও এত বড় বন্যা দেখিনি,’ বলছিলেন তিনি।

ব্রহ্মপুত্রকে বলা হয় আসামের লাইফ লাইন। সেই নদীকে ঘিরে যাদের বসবাস তাদের জন্য বন্যা নতুন কিছু নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ আর দ্রুত শিল্পায়নের কারণে দুর্যোগের ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আসামে এটা চলতি বছরেই দ্বিতীয় বন্যা। এর আগের বন্যায় মে মাসে মারা গিয়েছিলো ৩৯ জন।

রাজ্যে এরই মধ্যে গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে ১০৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি অনেক জায়গাতেই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রাঙ্গিয়া শহরের একজন সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা জাভির রাহুল সুরেশ বলছেন, ‘এবার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা এরই মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছি। এখন আমাদের অগ্রাধিকার হলো জীবন বাঁচানো।’ আসামের প্রধান বাণিজ্যিককেন্দ্র গৌহাটি। সেখানকার ধানখেতগুলো এখন কাদামাটিতে পূর্ণ জলাভূমিতে রূপ নিয়েছে।

অন্যদিকে উদিয়ানায় স্কুল, হাসপাতাল, মন্দির-মসজিদ- সব কিছুই এখন পানির নিচে। বাঁশ আর কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করছে মানুষ। অন্যরা সাঁতরাচ্ছে বাদামি রঙের পানিতে আর তাকিয়ে আছে কখন আসবে উদ্ধারকারীরা। কামরূপ জেলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি। এখন সেখানে শত শত মানুষ আটকা পড়ে আছে। ৬৪ বছর বয়সি সিরাজ আলী বলছিলেন, যখন তাদের গ্রাম প্লাবিত হয় ও সবকিছু ধ্বংস করে তখন তিনি জীবন নিয়েই সংশয়ে পড়েছিলেন। এখনো যে ঘরে তিনি আছেন তার একটি অংশে পানি।

সন্তানদের তিনি পাঠিয়েছেন রাস্তার ধারে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। আর নিজে অপেক্ষা করছেন তাকে সহায়তা করতে কেউ আসে কি না। বলছিলেন, পানি নেই, খাবার নেই- এ অবস্থায় আটকে আছেন। তবে সিরাজ আলী সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন প্রতিবেশী মোহাম্মদ রুবুল আলীকে।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়শ্রী রৌত বলছেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, এবারের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যোগসূত্র খোঁজার আগে বন উজাড়ের মতো মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সূত্র : বিবিসি

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close