নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু উদ্বোধন

অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো শুরু

আর মাত্র ৩ দিন পর পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দেশি-বিদেশি অতিথি। এখন উদ্বোধনের দিন, তার আগে এবং পরে নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সেতু এলাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে। ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

মোট তিন হাজার অতিথিকে উদ্বোধনের দিন আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তবে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা আছে। দুই প্রান্তেই সেতু উদ্বোধন হবে। ২৫ জুন সকালে মাওয়া প্রান্তে সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সুধী সমাবেশ হবে। এরপর সেতু পার হয়ে তিনি জাজিরা প্রান্তে যাবেন। সেখানে তিনি পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে জনসমাবেশে বক্তব্য দেবেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমন্ত্রিত সুধীজনদের এ তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, নির্মাণ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ অন্য কর্মকর্তারা। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে আমন্ত্রণ পাবেন তিন হাজার সুধীজন। জাজিরা প্রান্তে যে জনসভা হবে, সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত।

সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এর কোনো কাজই এখন বাকি নেই। সেতু, লাইটিং, অ্যাপ্রোচ সড়ক, টোল প্লাজা সবকিছুই প্রস্তুত আছে। এখন শুধু ফাইন টিউনিংয়ের কাজ চলছে। সব কিছু পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। উদ্বোধনের আগেই তারা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি হস্তান্তর করবেন। এটা উদ্বোধনের দুই-এক দিন আগে হতে পারে।

সেতুর খরচ কতদিনে উঠবে : মূল সেতু পুরোপুরিই বাংলাদেশের অর্থায়নে তৈরি হয়েছে। সেতু চালু হলে প্রতিদিন ২৭ হাজার যানবাহন চলাচলের আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সেতুর টোলও চূড়ান্ত হয়েছে, যা ফেরি পারাপারের খরচের চেয়ে বেশি বলে সমালোচনা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর খরচ কতদিনে উঠে আসতে পারে তা নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হার সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেমন ছিল যে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে, কারণ মোংলা পোর্ট যে এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে সেগুলো কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি। ধারণা ছিল পদ্মা সেতু ১.৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দুইয়ের কাছাকাছি চলে যাবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে এডিবি ছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা আছে। সব গবেষণায়ই সর্বনিম্ন এক থেকে সর্বোচ্চ ১.৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। আর সেতুর খরচ ২৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এসব গবেষণা যখন করা হয় তখন পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য খরচ এর চেয়ে কম ছিল। বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.২৫ শতাংশ।

গবেষকরা যা বলছেন : পদ্মা সেতুর সম্ভাব্য নির্মাণ খরচ যখন ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছিল তখন এই খরচের ওপর ভিত্তি করে এর অর্থনৈতিক দিক নিয়ে গবেষণা করে ব্র্যাকের সহায়তায় ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার। তাদের গবেষণার শিরোনাম ‘বেনিফিট অ্যান্ড কস্ট অব কমপ্লিটিং দ্য পদ্মা ব্রিজ’। এই গবেষণায় শুধু টোল আদায় নয়, পদ্মা সেতুর ফলে পুরো অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা তুলে ধরা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close