বগুড়া প্রতিনিধি

  ১৩ জুলাই, ২০১৯

থানায় ডেকে নিয়ে নারীকে পেটালেন পুলিশ কর্মকর্তা

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় কৌশলে থানায় ডেকে এনে কোহিনুর খাতুন (৪২) নামে এক নারীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহানুর রহমানের বিরুদ্ধে। আহত কোহিনুর ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া বৌবাজার এলাকার জাকির হোসেনের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী কোহিনুর খাতুন। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কোহিনুর তার বাবা একই এলাকার জাবেদ আলীর বাড়িতে থাকেন। বগুড়া জজকোর্টের সামনে খাবারের দোকানের আয় দিয়ে কোহিনুর সংসারের খরচ চালান। অভিযুক্ত শাহানুর রহমান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে। তিনি ২০১০ সালে বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চাকরি করতেন। ওই সময় কোহিনুরের দোকানে প্রতিদিন খাবার খেতেন শাহানুর রহমান। সেই সুবাধে কোহিনুরের সঙ্গে তার গভীর সখ্য গড়ে ওঠে। কোহিনুরের বাসায় শাহানুর রহমানের অবাধ যাতায়াত ছিল। ওই সময় শাহানুর কৌশলে কোহিনুরের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে শাহানুর রহমান বগুড়া থেকে বদলি হয়ে ধুনট থানায় যোগদান করেন। এ অবস্থায় প্রায় দুই মাস আগে পাওনা টাকা চেয়ে শাহানুরকে উকিল নোটিস দেন কোহিনুর। কিন্তু উকিল নোটিসে সাড়া দেননি শাহানুর রহমান। ফলে বগুড়া আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার প্রস্তুতি নেন কোহিনুর। খবর পেয়ে শাহানুর রহমান এক সপ্তাহ আগে কোহিনুর খাতুনকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে নেন।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কোহিনুর খাতুন পাওনা টাকার জন্য ধুনট থানায় আসেন। এ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শাহানুর রহমান পিটিয়ে থানা থেকে কোহিনুরকে বের করে দেন। আহত কোহিনুর ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এলে সেখানেও পেটাতে থাকেন শাহানুর। এ সময় স্থানীয় লোকজন কোহিনুরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ বিষয়ে কোহিনুর খাতুন বলেন, ‘শাহানুর কৌশলে আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। সেই টাকা চাইলে সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে রাজি হইনি। ফলে সে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

তারপর থেকে শাহানুর আমাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। ফলে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিই। বিষয়টি জানার পর শাহানুর টাকা দেওয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার কৌশলে থানায় ডেকে এনে আমাকে পিটিয়ে আহত করেছে।’

ধুনট থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কোহিনুর আমাকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিল। অবশেষে ঝামেলা এড়াতে তাকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে আপসনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তার পরও বৃহস্পতিবার থানায় এসে আমাকে মামলার ভয়ভীতি দেখালে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে চড়থাপ্পড় মেরেছি।’

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বগুড়ার সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোকবুল হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আহত কোহিনুরের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন।

ধুনট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসেছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close