রাকিবুল রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ৩১ মার্চ, ২০১৯

অভাব ঘুচেছে পিঠা বিক্রির টাকায়

পলিথিনে মোড়ানো মাঝারি আকারের একটি জার। তার ভেতরে সারি সারি সাজানো অনেক নকশী পিঠা। একজন মাঝবয়সি ব্যক্তি সেই পিঠাভর্তি জার কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছে সড়কের পাশ ধরে। কেউ পিঠা খাওয়ার জন্য ডাক দিলে থামছেন ব্যক্তিটি। পিঠা বিক্রি করে ফের জার নিয়ে ছুটে চলছেন সড়কের পাশ ধরে। গত শুক্রবার বিকেলে গৌরীপুর পৌর শহরের নয়াপাড়া রেলগেট এলাকায় প্রতিদিনের সংবাদের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় এ পিঠা ব্যবসায়ীর।

পিঠা খাওয়ার সূত্র ধরেই কথা হয় পিঠা বিক্রেতার সঙ্গে। তার নাম কোরবান আলী (৩২)। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলী গ্রামে। বাবা আবদুল কাদির। জীবিকার তাগিদেই সে এই পিঠা বিক্রির পেশায় এসেছে। বেশভূষায় সাধারণ মনে হলেও কোরবান আলীর কথা-বার্তা ছিল অত্যন্ত গোছানো। কোরবানের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ নয়াপাড়ার শিশু ও আশপাশের বাড়ির নারীরা পিঠা খেতে ভিড় জমায় তার এখানে। মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধশতাধিক পিঠা। এরপরও কোরবানের ৩০টির মতো পিঠা বিক্রি বাকি। নতুন ক্রেতার আশায় থাকতে থাকতে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প হয়। তিনি বলেন, ‘অভাবের কারণে স্কুলে পড়া হয়নি। জীবিকার তাগিদে ছোট বেলা থেকেই অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। কিন্তু সারা বছর আমাদের এখানে কাজ পাওয়া যায় না। তাছাড়া বিয়ে করে সংসার করায় জীবিকার খরচ বেড়েছে। তাই বাড়তি রোজগারের আশায় পিঠা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছি। এখন পিঠা বিক্রির টাকাতেই সংসারের চাকা ঘুরছে।’ ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সিরাজগঞ্জের এক মহাজন নকশী পিঠা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন। পিঠাগুলো বাজারজাত করার জন্য ওই মহাজন সিরাজগঞ্জ থেকে সাত থেকে আটজন লোককে থাকা-খাওয়ার শর্তে শম্ভুগঞ্জে নিয়ে এসেছেন। কোরবান তাদেরই একজন। প্রতিদিন মহাজনের কাছ থেকে তিন টাকা ৫০ পয়সায় প্রতি পিস পিঠা কিনে পাঁচ টাকায় বিক্রি করেন কোরবান। তারপর ময়মনসিংহ শহরের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে ঘুরে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। নকশী পিঠার খাদ্য মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দিন শেষে ২৫০ থেকে ৩০০ পিস পিঠা বিক্রি করেন তিনি। এতে তার লাভ হয় ৩৭৫ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। লাভের এই টাকা দিয়েই চলে তার সংসার, ছেলের পড়াশোনা ও বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসার খরচ। সংসারে কোরবানের স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। তবে তার বাবা-মা কোরবানের সঙ্গেই থাকেন। নিজে পড়াশোনা না করতে পারলেও কোরবান তার একমাত্র ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করতে চান। কোরবানের এই পিঠা বিক্রির কথা শুনতে শুনতে বিকেল হয়েছে। লাল বর্ণ ধারণ করা সূর্য তখন অস্ত যাওয়ার অপেক্ষায়। এমন সময় পিঠা কিনতে আসলেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি বলেন, বেশি পিঠা কিনলে ফ্রি দিবেন কয়টা? কোরবানের জবাব ‘আমরা ছোট ব্যবসায়ী, ফ্রি দেওয়ার সুযোগ নেই। পাঁচ টাকায় পিঠা বিক্রি করে খুব বেশি লাভ হয় না।’ এমন সময় একটি ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে রেলগেট অতিক্রম করে ছুটে যায় ময়মনসিংহের দিকে। ট্রেনের দিকে ইশারা দিয়ে কোরবান বলেন ‘শম্ভুগঞ্জ যাওয়ার ট্রেনটা ফেল করে ফেললাম। এ প্রতিনিধির দিকে তাকিয়ে কোরবান বলেন, পিঠাগুলো বিক্রি করতে আরো কিছুক্ষণ সময় হাঁটতে হবে। শম্ভুগঞ্জ যাওয়ার শেষ ট্রেনের সময়টা কখন বলতে পারেন?’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close