মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

মুন্সীগঞ্জে সেন বংশের রাজবাড়ি!

মুন্সীগঞ্জ সদরের রামপাল ইউনিয়নের বল্লালবাড়ি এলাকায় রাজা বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদের নিদর্শন পাওয়া গেছে। চীন ও বাংলাদেশের প্রতœতাত্ত্বিকদের যৌথ উদ্যোগে গত সোমবার জেলার বিক্রমপুরের বল্লাল সেনের বাড়িতে খননকাজ শুরু হয়। খননকালে সেখান থেকে ইট, ইটের টুকরো, মৃৎ পাথরের টুকরো ও কাঠ-কয়লা বেরিয়ে আসে। এ আলামত আমেরিকান ল্যাবরেটরি ‘বেটা’তে পাঠানো হবে। সেখান থেকে কার্বন পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর সংগ্রহ করা নমুনা কত বছর আগের তা জানা যাবে। বল্লাল সেন যেহেতু ইতিহাস খ্যাত তাই ওই ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন তথ্য ইতিহাসে যোগ হতে পারে। খনন কাজে অংশ নেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও চীনের অধ্যাপক চাই হোয়াংবোর নেতৃত্বে একটি দল। অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছেÑ বল্লাল বাড়িটিই রাজা বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদ ছিল। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন ছিলেন লক্ষণ সেনের বাবা। সেন বংশের রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। আর বিক্রমপুরেই অবস্থিত বল্লাল বাড়ি। বাড়ির চারদিকে একটি পরিখা আছে। প্রাসাদের নিরাপত্তায় কৃত্রিমভাবে এটি করা হয়েছিল বলে ধারণা আমাদের।

পরিখার ওপর দিয়ে রাস্তা ও ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু রামপাল কলেজের পেছন থেকে পরিখা স্পষ্ট দেখা যায়। অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও পরিখা নির্দেশ করে, ওই রাজার প্রাসাদ একটি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ছিল। অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এরই মধ্যে সন্ধান করে জানা গেছে, বল্লাল বাড়িটি একটি দুর্গ। দুর্গটি বর্গাকার। প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭২ মিটার। দুর্গের চারদিকে যে পরিখা ছিল তা প্রায় ৬০ মিটার প্রস্থ ছিল। তিনি বলেন, পাল বংশ ৭০০ থেকে ১২০০ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলায় রাজত্ব করেছে। কিন্তু তাদের রাজধানীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে বল্লাল সেনের এ বাড়ি একটি রাজবাড়ি। সোমবার খনন কাজ শুরু করার মাধ্যমে সেই চিহ্ন পাওয়া গেছে। মূল মাটির দুই থেকে তিন ফুট নিচে প্রাচীন ইট, ইটের টুকরো, মাটির পাত্রের টুকরো, কাঠ-কয়লা পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, বিস্তৃত আকারে খনন করা হলে এখানে দেয়াল বেরিয়ে আসে। যেমনটা পার্শ্ববর্তী রঘুরামপুরে ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরে পাওয়া গেছে। খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারলে, বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদ, মন্দির, রাস্তা-ঘাট সব কিছু পাওয়া যাবে। তবে প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। জায়গাটি এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এর মালিকদের অনুমতি নিয়ে ২০১১ সাল থেকে খননকাজ এগিয়ে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। খননের মধ্য দিয়ে সেন বংশের ইতিহাস এবং তৎকালীন বাংলার রাজধানী বিক্রমপুরের ইতিহাস তথ্যনিষ্ঠভাবে জানা যাবে। বিক্রমপুর তথা বাংলাদেশের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করবে এবং বিক্রমপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ছাড়াও প্রতœতত্ত্ব নগরী মুন্সীগঞ্জে আরও বেশি আকৃষ্ট করবে পর্যটকদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close