reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ জুন, ২০২২

জোবায়ের রাজুর হাসির গল্প

একমাত্র সন্তান

আমজাদ সাহেব একজন সরকারি চাকরিজীবী। শুক্রবার ছুটির দিন। এই দিনে তিনি সাধারণত স্ত্রী রোদেলা ও একমাত্র সন্তান আরিয়ানকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে বের হন। শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর অলিগলি এখন তাদের মুখস্থ। আরিয়ান বাবা-মায়ের এমন অবকাশযাপন খুব উপভোগ করে। একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে আরিয়ান বাবা-মা দুজনের ভালোবাসার সমান ভাগ পায়।

আজ শুক্রবার। শহরে নতুন একটি চিড়িয়াখানা চালু হয়েছে গত মাসে। আমজাদ সাহেব বউ-বাচ্চা নিয়ে সেই চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে যাবেন। রোদেলা প্রস্তুতিও নিয়েছে আনন্দের সঙ্গে। চোখে কাজল মাখতে গিয়ে রোদেলা টিউব কাজলের গুঁতো খেয়ে চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। চোখ ফুলে গেছে মুহূর্তেই। ফলে সে স্বামীর সঙ্গে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে যেতে পারছে না। চোখের যন্ত্রণায় কাঁদো-কাঁদো অবস্থা।

চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে যেতে না পারায় রোদেলার যতটুকু মন খারাপ, আমজাদ সাহেবের তার চেয়ে বেশি। কারণ সুন্দরী বউকে নিয়ে বাইরে বের হলে আশপাশের আমজনতার বিস্মিত চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি যখন সুন্দরী রোদেলার দিকে পড়ে, আমজাদ সাহেব তা চোরাচোখে দারুণ উপভোগ করেন। অথচ আজ রোদেলাকে ছাড়া তিনি বাইরে যাবেন বলে মনটা খারাপ। আমজাদ সাহেব মনে করেন ফিল্মের নায়িকার মতো এই বউকে নিয়ে কোথাও বের হওয়াতে একধরনের প্রশান্তি আছে। রোদেলা অবশ্যই নায়িকাদের থেকেও কোনো অংশে কম যায় না। বিয়ের আগে সে একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো একটি অবস্থানেও পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু আচমকা ডায়রিয়া হয়ে হাসপাতালে ১০ দিন পড়ে থাকার কারণেই সেই প্রতিযোগিতায় আর জায়গা হয়নি এই হতভাগীর।

২.

শহরের নতুন চিড়িয়াখানায় এসে আমজাদ সাহেব ও আরিয়ান দুজনের চোখে রাজ্যের মুগ্ধতা। এত সুন্দর দেশি-বিদেশি জীবজন্তুতে ভরপুর সত্যি চোখ জুড়িয়ে যায়। পশুপাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আমজাদ সাহেব ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে কয়েক দফা সেলফি তুলে ইতোমধ্যে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন। রোদেলা সেখানে কমেন্ট করেছে- ‘কাজলের গুঁতো খেয়েছি বলে আজ আমি তোমাদের সঙ্গে এখানে নেই।’ আমজাদ সাহেব রিপ্লাই করেন এই লিখে, ‘চোখ ভালো হয়েছে?’ রোদেলার এন্সার, ‘কিছুটা।’

বিশাল এক বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আমজাদ সাহেব ছোট্ট আরিয়ানকে বলছেন, ‘বাঘ খুব ভয়ংকর জন্তু। খুব হিংস্র এরা। আস্ত মানুষ খেয়ে ফেলে।’

শুনে ভয় পেয়ে গেল আরিয়ান। উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে বলল, ‘আব্বু, এই বাঘটি যদি খাঁচা ভেঙে এসে তোমাকে কামড়ে খেয়ে ফেলে!’ আমজাদ সাহেব মুচকি হেসে বললেন, ‘খেয়ে ফেললে তো সব শেষ। আমি মরে যাব।’ শুনে আরিয়ান ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগল। বাবার প্রতি এই এতটুকু ছেলের ভালোবাসা দেখে আমজাদ সাহেবের চোখে পানি চলে এলো। রক্তের টান আসলে এ রকমই হয়।

আরিয়ানের কান্না থামাতে আমজাদ সাহেব আদুরে গলায় বললেন, ‘বাহ তুমি তো আমাকে খুব ভালোবাস বাবা। বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলবে বলে এখনই কেঁদে দিলে!’ আরিয়ান চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, ‘আমি সেজন্য কাঁদছি না আব্বু। আমি কাঁদছি অন্য কারণে। বাঘ যদি সত্যি তোমাকে এখন খেয়ে ফেলে, তাহলে বাসায় যাব কার সঙ্গে? পুত্রের কথা শুনে ভারী লজ্জা পেয়ে আমজাদ সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। তিনি ভেবেছেন কী আর হয়েছে কী!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close