এম এ রউফ ও মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ১৮ আগস্ট, ২০১৭

ওসমানী মেডিকেলে জরুরি বিভাগে তালা

মেয়াদ শেষ হলেও চলছে পার্কিং বাণিজ্য, চাঁদা আদায়

সিলেটে স্বাস্থ্যসেবার শেষ ঠিকানা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে গত এক দশক ধরে ঝুলছে রহস্যময় তালা। এর পেছনে রয়েছে হাসপাতালের ভেতরে গড়ে উঠা গাড়ী পার্কিং বাণিজ্য সিন্ডিকেট। অভিযোগ আছে, গাড়ি পার্কিংয়ের লিজের মেয়াদ ১ বছর আগে শেষ হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলার অযুহাতে এখন বহালতবিয়তে আছে এস এন এন্টারপ্রাইজ। তাদের মন-মর্জিতে বন্ধ আছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট। ফলে সরু রাস্তা ও হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে রোগীদের যাতায়াত করতে হয়, এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে থাকা ৩টি গেইটের মধ্যে মেডিকেল কলেজ গেইট, হাসপাতালের প্রধান ফটক ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকার নির্দেশ আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে তালাবদ্ধ জরুরি বিভাগের গেইটের সামনে গড়ে উঠেছে সিএনজি স্ট্যান্ড আর হাসপাতালের ভিতরের অংশে গড়ে উঠেছে ভ্রামমান আঁচার ও চানাচুরের দোকান। এছাড়াও ওসমানী হাসপাতাল রেস্তোরার পানীয় ও ময়লা আর্বজনা ফেলে রাখা হয়েছে। এর কিছু দূরে নায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের সামনে ও পুরাতন জরুরি বিভাগের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে সিএনজি, কার-মাইক্রো ও অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ স্ট্যান্ডে প্রতিদিন ৬০-৭০টি গাড়ি থাকে। এখান থেকে দৈনিক কয়েক হাজার টাকা আয়ের কিছু অংশ যায় মেডিকেল কলেজের ভেতরের সিন্ডিকেটের কাছে, একটি অংশ যায় এলাকার নিয়ন্ত্রণে থাকা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর কাছে, অপর অংশ যায় মেডিকেল কলেজের বাইরে শ্রমিক নেতা নামদারীদের কাছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশের গাড়ী পার্কিংয়ের স্থানটি টেন্ডারের মাধ্যমে ১০ বছর আগে লিজ দেওয়া এস এন এন্টারপ্রাইজকে। কিন্তু লিজের মেয়াদ একবছর আগে শেষ হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মামলা চলার সুবাদে তারাই আছে নিয়ন্ত্রণে। নিয়ম অনুযায়ি, শুধু পার্কিং জোনের ভেতর থাকা গাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারা হাসপাতালে আগত সব পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করেন তারা। আর এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে শুরু থেকেই জরুরি বিভাগ গেইট বন্ধ রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ করার না শর্তে হাসপাতাল স্ট্যান্ডের এক পরিবহন শ্রমিক জানান, এই জরুরি বিভাগ গেইট বন্ধ করে রাখা হয়েছে ১০ বছর পূর্ব থেকে। যার প্রধান কারণ হচ্ছে এস এন এন্টার প্রাইজের গাড়ী পার্কিং। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অতিরিক্তি সুবিধা দিতে গিয়ে এ গেইট বন্ধ করে দিয়েছে।

ওসমানীনগর এলাকা থেকে আসা রাহীব আহমদ জানান, (১৬ আগস্ট) সকালে প্রাইভেট কারে বোনকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। কিন্তু হাসপাতালের মূল ফটকে আমার কাছে ২০ টাকা গেইট পাস দাবী করে। কি জন্য এ টাকা দিব, জানতে চাইলে পার্কিং জোনের লাইনম্যান জানায়, এ হাসপাতালে কোন গাড়ী প্রবেশ করলে এ খানে পার্কিংয়ের টাকা দিতে হয়। এতে আপনি গাড়ী পার্কিং করেন আর নাই করেন।

জরুরী বিভাগ গেইটে তালার সাথে পার্কিংয়ের কোন সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে এস এন এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন জানান, আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট টাকা পাই, যার কারণে হাইকোর্টে আমি মামলা করি। হাইর্কোটের অর্ডারের প্রেক্ষিতে আমি এখানে পার্কিং পরিচালনা করে আসছি। কিসের টাকা পান জানতে চাইলে তিনি জানান, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে জেনে নিবেন।

এক বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও কোন বিষয়ে রিট বলে লিজ গ্রহীতারা এখনো চাঁদা আদায় করছে তা জানাতে পারেন নি ওসমানী হাসপাতালের টেন্ডার শাখার কর্মকর্তা জমির উদ্দিন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট টাকা পাওনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। ’

‘গাড়ী পার্কিংয়ের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে তবে হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় তাতে কিছু করা যাচ্ছে না। ’ বলে জানান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাহবুবুল হক। তার দাবি, জরুরি বিভাগের গেইট মূলত খোলা হয় না দুষ্কৃতিকারীদের জন্য। তারা এ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তাই এটা বন্ধ রয়েছে বলে আমি শুনেছি। তবে কর্তৃপক্ষের নিকট টাকা পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সরকারী হাসপাতাল এখানে কোন ব্যক্তির টাকা বাকী থাকার কথা নয়। তবে সব পরিবহন থেকে চাঁদা নেওয়া বিষয়টি তার জানা নেই বলে দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist