প্রতিনিধি বদলগাছী (নওগাঁ)

  ০১ জানুয়ারি, ২০২৪

নওগাঁর বদলগাছী

দুই মাসে ৩৪ ট্রান্সফরমার চুরি চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা

নওগাঁর বদলগাছীতে গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলায় এই চুরি হচ্ছে বলে মন্তব্য কৃষকদের। ট্রান্সফরমার চুরি হলে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছেই অভিযোগ করা হয় এবং তারাই এর সমাধান করেন। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে থানায় তেমন জানান না এবং অভিযোগও হয় না। চুরি হওয়া বেশির ভাগ ট্রান্সফরমারই কৃষকদের জমিতে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই ক্ষতির বোঝা পড়ে তাদের ঘাড়েই।

পবিসের নিয়মানুযায়ী, প্রথমবার চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারের জায়গায় নতুন ট্রান্সফরমার পুনরায় স্থাপন করতে গ্রাহককে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এরপর চুরি হলে ট্রান্সফরমারের পুরো মূল্যই দিতে হয় গ্রাহককে। চুরির কারণে বার বার ট্রান্সফরমার কিনতে গিয়ে কৃষকেরা লোকসানে পড়েন, যা কাটিয়ে উঠতে পারেন না অনেকে।

বাজারে চাহিদা এবং মূল্য ভালো থাকায় প্রতি বছর ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গভীর নলকূপের অপারেটরসহ কৃষকরা। জানা যায়, গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই দুই মাসে ৩৪টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। যার গড়মূল্য প্রায় সাড়ে ২১ লাখ টাকা। একেকটি ট্রান্সফরমার ৫ ও ১০ কেভি বিদ্যুৎ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং প্রতিটি ট্রান্সফরমারে ৯ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত তামার তার থাকে। প্রতি কেজি তামার মূল্য কমপক্ষে ১২০০, ৫ কেভি ট্রান্সফরমারের মূল্য ৪৫ হাজার ও ১০ কেভি ট্রান্সফরমারের মূল্য ৬৮ হাজার টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, বোরো চাষের মৌসুমে এভাবে সেচ পাম্প ও ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় সেচের কাজ ব্যাহত হয়। ফসল বাঁচাতে দ্রুত এসব ট্রান্সফরমার ও সেচ পাম্প কিনতে গিয়ে বেশি টাকা ব্যয় হয়। এতে কৃষকদের

ভোগান্তির পাশাপাশি চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক রশিদ, রফিকুল, রনজুসহ ১০/১২ জন কৃষক বলেন, গভীর নলকূপের বেশির ভাগ জায়গায় সমবায় সমিতি না থাকায় অপারেটর একা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে অপারেটর বা কোনো পাহারাদার না থাকার কারণে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার মূল কারণ বলছে তারা। আর ট্রান্সফরমার চুরির অজুহাত দিয়ে সাধারণ কৃষকের পকেট কাটছে কিছু অসাধু অপারেটর।

তবে বেগুনজোয়ার গ্রামের অপারেটর জনি, পারিচা গ্রামের শামিম এবং তেজাপাড়া গ্রামের সুলতান আহম্মেদ বলেন, রাতে চুরি হলে সকালে বরেন্দ্র অফিস এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বরেন্দ্র অফিসের জাহাঙ্গীর স্যার বলেন, ‘ কিছু করার নেই। নতুন ট্রান্সফরমার কিনে নিন।’

সচেতন মহল মনে করে, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চাইলে অপারেটর মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এবং থানা-পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চুরি রোধ করতে পারে।

বদলগাছী বিএমডিএর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক চাল মিল মালিক বিক্রি করতে চেয়েছিল। তাই ওই অপারেটরকে বলেছি। প্রয়োজনের বেশি তো কেউ ট্রান্সফরমার রাখতে পারে না। তাহলে মিল মালিক বিক্রি করবে কীভাবে? জবাবে তিনি বলেন, সে ব্যবসা ক্লোজ করবে।

বদলগাছী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আহসান হাবিব বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করে বলা হয়েছে।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার পর অনেক মাঠ ফাঁকা হয়েছে। এই সুযোগে তারা এ কাজ করছে। চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close