আনোয়ার হোসেন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)

  ২০ মার্চ, ২০২৩

এক যে ছিল ঢেঁকিকল

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে একসময় কৃষিসেচ ব্যবস্থাপনায় একমাত্র মাধ্যম ছিল মাটির কূপ-কুয়া। এ মাটির কূপ-কুয়া থেকে কৃষক হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বালতির সাহায্য পানি উত্তোলন করে ফসল ফলাতেন। এতে মিটতনা সেচের চাহিদা। উৎপাদন হতো না তেমন ফসল। এ অবস্থায় ঘরে ঘরে ছিল মঙ্গার আঁতুরঘর। কুয়া খনন করতে গিয়ে অনেক কৃষিশ্রমিক মারাও গেছেন। কৃষকের এমন সমস্যা থেকে উত্তরণে পরে আবির্ভাব ঘটে কৃষক বন্ধু ট্রেডল পাম্প বা পা চালিত ঢেঁকিকল। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পানিসেচের ঢেঁকিকল।

জানা গেছে, এ পদ্ধতি যা খেতে খামারে পানি সরবরাহে কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে হয়ে ওঠে। গ্রামবাংলার কৃষিসেচ ব্যবস্থাপনায় এসেছে আমূল পারিবর্তন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পানিসেচের ঢেঁকিকল। ঢেঁকিকল পা-চালিত একটি সাকশন পাম্প। এটির যন্ত্রকৌশল অনেকটা টিউবওয়েলের মতো। ২০ থেকে ২৫ মিটার বা তার কম গভীরতা থেকে পানি তোলার জন্য এটি উপযুক্ত। ৫ ফিট লম্বা মোটা বাঁশের দুটি পাদানি ওঠানামার মাধ্যমে পানি তোলা হয়। দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি সমান দূরত্বে মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে সংযুক্ত পাদানি লিভারের কাজ করে, যা একটি পাইপের মধ্যে থাকা দু-মুখ পিস্টনকে চালায়। এভাবে অনবরত পা দিয়ে ঢেঁকি চালিয়ে পানি উত্তোলন করা যন্ত্রকৌশল বিশেষ, যা এর মাধ্যমে সেচ দিয়ে ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষক চাষাবাদ করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজতর করতে কৃষিতে যুক্ত হয়েছে ডিজেলচালিত স্যালো, ডিপটিউবওয়েল, বৈদ্যুতিক পাম্প, সেচ ক্যানেলসহ প্রভৃতি সেচযন্ত্র। এক ফসলি জমিতে উৎপাদন হচ্ছে ৩-৪ ফসল। ছনের ঘরের স্থলে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠছে দালানবাড়ি, যা অধিক সেচের চাহিদা মেটাতে না পারায় ঢেঁকিকলের কদর নেই বললেই চলে।

এদিকে এর ব্যবহার চোখে পড়ে সদর ইউনিয়নের মুশা ঝাড়পাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের নুর ইসলাম টুকিটাকি সেচের চাহিদা মেটাতে আজও এর ব্যবহার ধরে রেখেছেন। তিনি জানান, সামান্য জমিজমা তার, স্যালো, কিংবা বৈদ্যুতিক পাম্পে বাড়তি খরচ গুনতে হয়। এ বাড়তি খরচ এড়াতে নিজের শ্রমে উঠোনবাড়িতে শাকসবজি, বোরোসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদে ঢেঁকিকলের মাধ্যমে সেচের চাহিদা মেটাচ্ছেন। মানুষ এখন আত্মসামাজিক পরিবর্তনে অল্প সময়ে অধিক জমিতে সেচযন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। এতে ঢেঁকিকল বিলুপ্তির পথে।

কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক জ্যোতি কৃষ্ণ রায় বলেন, ১৯৭৭ সালে ঢেঁকিকল আবিষ্কার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন, ট্রেডল পাম্প, ট্রেডল প্রিন্টিংপ্রেসের উদ্ভবক কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলার কাশিয়াখামার গ্রামের নরেন্দ্রনাথ দেব, যা ১৯৭৮ সালে ট্রেডল পাম্প ঢেঁকিকল উদ্ভাবন করে রাষ্ট্রীয় পদক পান তিনি। দেশে কৃষি খাতে যে বিপ্লব তা ঢেঁকিকলের মাধ্যমে এসেছিল। সময়ের প্রয়োজনে যন্ত্রনির্ভরযুগে তার আবিষ্কৃত ঢেঁকিকল বিলুপ্তির পথে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, বর্তমান শতভাগ জমি সেচের আওতায় আসায় ঢেঁকিকলের ব্যবহার উঠে যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close