জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

পানিশূন্য তিস্তা, চিন্তায় কৃষক

প্রতি বছর নদীর বুক চিরে নতুন নতুন চর সৃষ্টি হয়েছে। পানিশূন্য হয়ে পড়েছে এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদী। তিস্তার চারিদিকে তাকালেই এখন দৃশ্যমান ধূ ধূ বালুচরের। এক সময় এই নদীর পানির কলকাকলীতে চারপাশ মুখরিত থাকলেও বর্তমানে যৌবন হারিয়ে বালুচরে পরিণত হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই নদীটি। নদীর জেগে উঠা চরের কোনো এক পাশ দিয়ে ছোট নদী আকারে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। তিস্তার নাব্য হ্রাস পাওয়ায় চলতি মৌসুমে দেশের তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও এ বছর উত্তরের পাঁচ জেলার ১৪টি উপজেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পানি না থাকায় নদী এলাকার জেলে ও কৃষিজীবী মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

হিমালয় পর্বতমালার পাহুন্দ্রী হিমবাহ থেকে সৃষ্ট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে গেছে। নদীর উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ এবং বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প করেছে ভারত। নদী থেকে একতরফা পানি তুলে নেওয়ায় বাংলাদেশের অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে ক্ষীণাকৃতি ধারণ করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশে প্রবেশের পর উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারেজ নির্মাণ করে নদী দিয়ে বয়ে আসা পানির গতিকে রোধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত আটকে তুলে নেওয়া হচ্ছে পানি নামের জীবন। ফলে বাংলাদেশ অংশে নদীর বয়ে যাওয়া দীর্ঘ পথের অধিকাংশ পথই শুষ্ক মৌসুমে থাকছে পানিশূন্য।

আবার বর্ষায় সর্বনাশী রূপ নেয় তিস্তা। গভীরতা কম থাকায় বর্ষাকালে অল্প পানিতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যার। যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদী তীরবর্তী হাজারো বাসিন্দার বসতভিটা ও ঘরবাড়ি। ভেসে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা কোটি কোটি টাকার স্থাপনা। প্রতি বছর নতুন করে সংখ্যা বাড়ে ভূমিহীন পরিবারের।

চলতি মাসেই শুরু সেচ নির্ভর ইরি-বোরোর চাষাবাদ। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধানের শীষ হেলে না পড়া পর্যন্ত সেচ দিতে হয় এ মৌসুমে। সে পর্যন্ত বোরো আবাদে সেচ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সেচের আওতাভুক্ত এলাকার কৃষকদের জন্য তিস্তার সেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ সময়ে তিস্তা প্রায়পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় জেগে উঠা জমির পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ হেক্টর। এ বছর চাষাবাদ হয়েছে আট হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তবে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। জেগে উঠা চরের বৃহৎ অংশই চাষাবাদের বাইরে রয়েছে এখনো। নদীতে পানি সংকট থাকায় কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাটের সভাপতি গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, রংপুর অঞ্চলের প্রাণ তিস্তা নদী। অথচ সেই নদীটিই এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সরকারের পরিকল্পনায় থাকা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত বলে আমি মনে করছি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদীন ইসলাম জানান, সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে কমপক্ষে এক লাখ ২০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। অথচ বর্ষা শেষ না হতেই গত ১০ দিনে গড়ে ব্যারাজের মূল গেটের পানি প্রবাহ রয়েছে ২৫ হাজার ৩০০ কিউসেক। যা দিয়ে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম শুরু করা কষ্টকর হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close