মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর)

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ গাছিদেরও পেশা বদল

যশোরের শার্শা উপজেলায় গাছিদের মধ্যে শুরু হয়েছে খেজুর রস সংগ্রহের তোড়জোড়। এখনও শীত জেঁকে না বসলেও জেলার সবখানে খেজুর গাছ প্রস্তুুত করা হয়েছে। তবে অধিক পরিশ্রম হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কৃষকের মধ্যে রস-গুড় উৎপাদনে আগ্রহ কম রয়েছে। পেশা বদলিয়েন গাছিরাও। ফলে খেজুর গাছ থাকলেও গাছির সংকটে সব গাছ উৎপাদনে নেওয়া হয় না।

জানা গেছে, মাঠের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ থেকে শীত মৌসুমে জেলার কয়েক হাজার গাছি রস-গুড় উৎপাদন করে। এতে তারা যে অর্থ উপার্জন করে তাদের বছরের অর্ধেক সময়ের জীবিকার ব্যবস্থা হয়। যশোরে প্রায় ১৬ লাখ খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গাছে রস উৎপাদন হয়। যেমন কমছে খেজুর গাছ, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে রস সংগ্রহকারী ‘গাছি’। বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এ রসের স্বাদ, গুড় পাটালি বা রসে ভিজানো পিঠাণ্ডপায়েস খাওয়ার আনন্দ। এক সময় খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। গড়ে ৮ থেকে ১০ জন পেশাদার গাছি পাওয়া যেত। এ পেশায় কেউ না আসায় কমে গেছে গাছি।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম গিয়ে দেখা গেছে, খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আগে খেজুর গাছের যেসব বাগান ছিল এখন আর তা অবশিষ্ট নেই। নতুন করে এখন আর কেউ বাগান করছে না। মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অল্প-বিস্তর যেসব গাছ আছে তারও বেশিরভাগ পড়ে আছে। অল্প কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ কাটা হয়েছে। অনেকে বলছেন, আগে শীত এলে গ্রামে গ্রামে খেজুরের রসে ভিজানো ‘রসের পিঠা’ খাওয়ার যে ধুম পড়ত তা এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।

উপজেলার বাহাদুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এই গাছ তোলার (কাটার) কাজে নিয়োজিত গাছিরা চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।

ছোট আঁচড়া গ্রামের গাছি কোরবান আলী বলেন, আগে শীতকালে শত শত গাছ কাটিছি। অনেক রস পেতাম, বাজারে বিক্রি করতাম। জ্বালিয়ে গুড় বানাতাম। গুড় পাটালি বাজারে বিক্রি করতাম। শীত আসলিই বেশ টাকা আয় করতাম। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই দিন কাটত। কিন্তু এখন এলাকায় তেমন একটা খেজুর গাছ নেই। যা আছে তা মালিকরা নিজেদের জন্য কাটাচ্ছে। তাই কাজ না পেয়ে গাছিরাও অন্য পেশায় চলি যাচ্ছে।

শার্শার শ্যামলাগাছি গ্রামের গাছি আমিনুর রহমান বলেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে কৃষকের বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা পরিচর্যা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

যশোরের শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল বলেন, উপজেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ৫২ হাজার ২৮০টি। এরমধ্যে মোট ফলন্ত (রস দেওয়া) গাছের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫২০টি। গাছির অভাবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় না। আর টাকার লোভ দেখিয়ে এই অনাবাদি খেজুর গাছগুলো অবৈধ ইটভাটার মালিকরা কেটে নিয়ে যান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলায় প্রায় ১৬ লাখ খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গাছে রস উৎপাদন হয়। এসব খেজুর গাছ থেকে বছরে পাঁচ কোটি লিটারের বেশি রস উৎপাদিত হয়। এই রসে বছরে গুড় উৎপাদিত হয় প্রায় ৫২ লাখ কেজি। যার মূল্য শত কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে জেলার ১৩ হাজার ১৭৩ জন গাছি রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close