আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ০২ ডিসেম্বর, ২০২২

কষ্টের জীবন তাদের

গ্রামীণ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গ্রাম পুলিশ বিশেষ অবদান রাখছে। সার্বক্ষণিক গ্রামীণ জনসাধারণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখলেও তাদের খোঁজ কেউ রাখে না। হয়নি তাদের ভাগ্যের নেই তেমন কোনো পরিবর্তন। স্বল্প বেতনে চলে তাদের সংসার জীবন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম পুলিশ।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৩৯ জন গ্রাম পুলিশ গ্রামীণ সেবায় নিয়োজিত। ইউনিয়নের কোথাও কোনো সমস্যা শোনা মাত্রই সেবা দেওয়া শুরু করেন তারা। ইউনিয়নের যেকোনো সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়া সরল বাহিনী গ্রাম পুলিশের সদস্যগুলো পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও যেনো দেখার কেউ নেই।

বর্তমান সময়ে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা বেতন পান ছয় হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে তিন হাজার ২৫০ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পান তিন হাজার ২৫০ টাকা। এই টাকাও তারা নিয়মিত পান না বলে অভিযোগ করেন এই বাহিনীতে কর্মরত সদস্যরা। এই টাকা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সরকারের অংশ নিয়মিতই পায় তারা।

ছয় হাজার ৫০০ টাকা বেতন তারা ২০১৬ সাল থেকে পান। এরপর দ্রব্যমূল্য বাড়লেও বাড়েনি তাদের বেতন। ২০১৬ সালের আগে গ্রাম পুলিশ সদস্য বেতন পেতেন তিন হাজার ৫০০ টাকা। ২০০৯ সালে তাদের বেতন ছিল এক হাজার ৪০০ টাকা। মাসের পর মাস অপেক্ষা করার পর তারা বেতন তুলতে পারেন। মাসিক বেতন ছাড়া তারা অন্যান্য সুযোগের মধ্যে শুধু মাত্র দুটি ঈদে বেতনের সমপরিমাণ বোনাস পান। এ ছাড়া তাদের আর কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। অথচ এসব গ্রাম পুলিশ সদস্য স্থানীয় ইউপি সচিবকে জন্ম-মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে প্রদান করা, ইউপি ভবন ও বিভিন্ন সড়কে রাত্রিকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন, গ্রাম আদালত, গ্রামে কোনো সংস্থার কর্মসূচি চলাকালীন ও সড়ক দুর্ঘটনার স্থানে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা, অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর সংবাদ থানায় জানানো, মাদকদ্রব্য ও জুয়া প্রতিরোধে অভিযান চালাতে সহযোগিতা করাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা।

প্রায় ৩০ বছর ধরে গ্রাম পুলিশে কর্মরত থাকা উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেওড়া গ্রামের আউয়াল শেখ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জীবনটাই কাটিয়ে দিলাম গ্রামের মানুষের সেবায়। সেই তুলনায় আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। একদম অল্প টাকা থেকে চাকরি শুরু করে ২০২২ সালে বেতন এসে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫০০ টাকায়। বর্তমান সময়ে এ টাকা দিয়ে কি হয়।

একই ইউনিয়নের ফুলবাড়ীয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন, চাকরির জীবনও প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু জীবনে কিছুই করতে পারলাম না। যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা চাইলে, ভালো কিছু খেতে চাইলে দিতে পারি না। বাবা হিসাবে এর থেকে আর কষ্টের কি হতে পারে। এছাড়া সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা থাকলেও আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কোনো কোটা ব্যবস্থা নেই। শেষ জীবনে সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি চাকরিটা যেন জাতীয়করণ করা হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদের চাকরির ক্ষেত্রে যেন কোটা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়।

পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আফসানা চৌধুরী বলেন, গ্রাম পুলিশ সদস্যরা অনেক দায়িত্ব পালন করেন। এই বাহিনীর বেতন কয়েক ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া গ্রাম পুলিশকে বিভিন্ন ট্রেনিং করানোর সুবিধাসহ তাদের বেতনের সরকারি অংশ নিয়মিতই পেয়ে থাকেন। তাদের বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি পুরোপুরিই মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবুও আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গ্রাম পুলিশের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close