রজব আলী, মোস্তফা ও আজাদ তিন বন্ধু। এক সময় কৃষিশ্রম বিক্রি করে ওদের সংসার চলতো। অন্যের দেখে তিনবন্ধু মিলে বছর খানেক আগে আড়াই লাখ টাকায় ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই মেশিন ক্রয় করেন। শ্রমিকও তারাই। নিজগ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামগুলোতে মাড়াইয়ের ডাক পেলেই মেশিন নিয়ে ছুটে যান তারা। মাড়াই করে কৃষকের উৎপাদিত ধানের নির্ধারিত অংশ পান তারাও। এতেই স্বাবলম্বী তিন পরিবার। তারা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের পিপলা গ্রামের বাসিন্দা।

উপজেলা বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সোনা রঙা পাকা ধানক্ষেত। সেই ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসবে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক। ধান মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজকে দ্রুত ও সহজ করতে উপজেলার সর্বত্র ভাড়ায় মিলছে মাড়াই মেশিন। সময় ও খরচ সাশ্রয়ী মাড়াই মেশিন অনেকেরই জীবিকার উৎসে পরিনত হয়েছে।

গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দ নগর মহল্লায় সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষক ক্ষেত থেকে ধান কেটে বাড়ির উঠানে গাঁদা করে রেখেছেন। খবর দিলেই ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই মেশিন কৃষকের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। এতে অবশ্য কৃষকের পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কমেছে। ধানের বোঝা মেশিনে দিলেই খড় ও ধান আলাদা হয়ে বের হচ্ছে।

মাড়াই মেশিনের মালিক রজব আলী জানান, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান মাড়াই করতে ক্ষেত্রভেদে সময় লাগছে এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘন্টা। এরজন্য তারা নিচ্ছেন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ধান। যার বাজার মূল্য ১ হাজার টাকার ওপরে। এতে কৃষকের যেমন সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে তারাও লাভবান হচ্ছেন।

আরেক বন্ধু মোস্তফা জানান, ধান মাড়াইয়ের জন্য বছরে দুটি মৌসুম। দুই মৌসুম মিলে তারা ২৫০ মন ধান সংগ্রহ করেছেন। যার বাজার মূল্য ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো। বছরে ধান মাড়াই করেই তারা অন্তত ১ লাখ টাকা আয় করেন। শুধু ধান নয়, গম, ডাল ও তেল জাতীয় ফসলও এ মেশিনে মাড়াই করেন তারা। এক মেশিন তাদের সাবলম্বী করেছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, উপজেলাজুড়ে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ তাদের কাজকে সহজ করেছে। ব্যক্তি মালিকানায় অনেকেই ভাড়ায় চালিত মাড়াই মেশিন কিনে লাভবান হচ্ছেন। আবার ভর্তুকি মূল্যে হারভেস্টার মেশিনে সরবরাহ করা হচ্ছে।

"