মো. মোস্তাফিজ, তালতলী (বরগুনা)

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সোনাকাটা ইকোপার্ক বেহাল কমে যাচ্ছে দর্শনার্থী

ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কটির এখন বেহাল অবস্থা। পার্কটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি। ফলে দিন দিন কমছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। সরকার হারাতে বসেছে রাজস্ব ।

পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, পার্কে চলাচলের সুবিধার্থে ছোট ছোট খালের ওপর নির্মিত সেতুগুলো ব্যবহারের করা যাচ্ছে না। হেরিংবন সড়কের ইট উঠে যাওয়ায় এসব সড়কও চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়া গভীর নলকূপ, শৌচাগারের দরজা-জানালা ও বেসিন ভেঙে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের পর টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সকিনা বিটে ২০১০-২০১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাকাটা ইকোপার্ক নামে এই পার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর উপকূলীয় এই বনাঞ্চল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সংস্কার করা হয়নি বলে জানা যায়।

বন বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বনের ভেতরে বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইটের প্রাচীর ও লোহার গ্রিল দিয়ে সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়। প্রাচীরের ভেতরে চিতা বাঘ, হরিণ, শূকর,অজগর, কুমির, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বনভোজনের স্থান, চলাচলের জন্য বনের ভেতরে ছোট ছোট খালের ওপর ১৬ টি কাঠের সেতু, চারটি গভীর নলকূপ, চারটি শৌচাগার, চারটি বিশ্রামাগারসহ ইটের সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণ করা হয়। ইকোপার্কটি নির্মাণের পর এসব অবকাঠামো দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে কিছুদিনের মধ্যেই পার্কটি বেহাল হয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বনের ভেতরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপিত চারটি গভীর নলকূপ গুলো অকেজো পড়ে রয়েছে। এছাড়া দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য নির্মিত তিনটি শৌচাগারের ভেঙে চুরে পরিত্যাক্ত অবস্থান পড়ে আছে। বনের ভেতরে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য সকিনা খাল থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হলেও এই সড়কের ইট উঠে গেছে। বন্য প্রাণীদের থাকার স্থানের চারপাশে নির্মিত লোহার গ্রিলে মরিচা ধরে অনেক জায়গায় তা ভেঙে পড়ে রয়েছে। দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। ইকোপার্কের কুমির প্রজনন কেন্দ্রেরও করুন অবস্থা।

পটুয়াখালীর বাউফল এলাকার শফিকুল ইসলাম ও সুখি বলেন, পার্কটির ভেতরের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় এবং সড়কের সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া এই ইকোপার্কটির অবস্থা খুব বেহাল, এখানে বন্য প্রাণীদের জন্য নির্মিত বেষ্টনী নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পার্কে আসতে হলে একটি বড় খাল ছোট খেয়া নৌকায় পাড় হতে হয়। এ কারণে পার্কে পযর্টকদের সংখ্যা কমছে।

টেংরাগিরি ইকোপার্কের দায়িত্ব থাকা সখিনা বিটের বিট কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, পার্কের হাটার সড়কগুলোর সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। শৌচাগার, বিশ্রামাগার নির্মাণের সময় হয়তো লবনাক্ত পানি ব্যবহার করা হয়েছে কারণে এই স্থাপনাগুলো ভেঙে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের এখানে বর্তমানে চারটি হরিণ আছে।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, পার্কে পযর্টকদের জন্য নূন্যতম সুযোগ সুবিধা দরকার তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। আমরা এ বিষয়ে বন বিভাগকে বলেছি। পার্কে প্রবেশদ্বারে খালের উপর নির্মিত ব্রিজের বিষয়ে বলেন এই ব্রিজের বনের অংশে সিঁড়ি করে ব্রীজ ব্যবহার করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close