মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ০৪ জুলাই, ২০২২

তিন উপজেলায় আবাদ হয়নি সোনালি আঁশ

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে কমেছে সোনালি আঁশ চাষ

উত্তরের জেলা নওগাঁ ধান ও আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। একসময় ব্যাপক পাট চাষ হতো এ জেলায়। কিন্তু পাট চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যওয়া ও সে তুলনায় দাম না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ কমেছে নওগাঁর চাষিদের। এতে বছর বছর কমছে পাটের আবাদ।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জেলায় ৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাটের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর। ২০২০-২১ অর্থবছরে পাটের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৯৩৩ হেক্টর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ হাজর ১৫০ হেক্টর এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর। গত ৫ বছরের ব্যবধানে পাটের আবাদ কমেছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর।

উপজেলা ভিত্তিক পাট চাষ হয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৬০০ হেক্টর, রানীনগরে ৪০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ২৫০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২০০ হেক্টর, পত্নীতলায় ১৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৮৩০ হেক্টর এবং মান্দায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলায় (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) চলতি বছর কোনো পাটের আবাদ হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয় জেলার মান্দা উপজেলায়।

জেলার একাধিক চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাগ দেওয়া, আশঁ ছড়ানো, হাল, বীজ, সার, নিড়ানি ও পরিবহন খরচসহ পাট চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১২-১৪ হাজার টাকা করে। এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে ১২ মণ পাট পাওয়া যায়। এছাড়াও পানি সংকটে জাগ দেওয়া সমস্যা, শ্রমিক সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ায় এবং দাম না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ নেই। অন্যদিকে পাটের আবাদ কমে যাওয়ায় গত দুই বছর থেকে বেড়েছে পাটের দাম। গত বছর প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন পাট চাষিরা।

রাণীনগর উপজেলার ভেনলা গ্রামের পাট চাষি দেবাশিষ কর্মকার বলেন, বেশ কয়েক বছর থেকে পাট চাষের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সে অনুযায়ী পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই। চলতি বছর ২ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। লোকসান হলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। কারণ খরচের তুলানায় দাম ভালো না পেলে চাষ করে কি লাভ।

জেলার মান্দা উপজেলার সাবাইহাট গ্রামের পাট চাষি কছিম দেওয়ান বলেন, এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। শ্রমিকের মজুরি ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভালো দাম না পেলে লোকসান গুনতে হয়। গত বছর কিছুটা লোকশান হয়েছিল। প্রতি বিঘায় পাট চাষে ৮ থেকে ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। আবার পাটকাঠি পাওয়া যায়। দেখা যায় সব মিলিয়ে আয়-ব্যয় সমান হয়ে আয়।

বদলগাছী উপজেলার ভান্ডাপুর গ্রামের চাষি শহিদুল হক জানান, প্রতি বিঘায় পাট চাষ করতে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকার মত। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা থেকে পাট পাওয়া যায় ১০-১২ মণের মত। দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এর আগের বছর ৩ বিঘাতে পাটের চাষ করেছিলাম। তেমন একটা লাভ হয়না। যার কারণে তেমন আগ্রহ নাই চাষিদের মাঝে। তবুও আমরা তো চাষি আবাদ করে খেতে হবে তাই চাষ করে যাচ্ছি।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মনজুরে মাওলা বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের ল্যমাত্রার ছিল। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর। যা ল্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর। পানি সংকটে পাট জাগ দেওয়া (পচানো) সমস্যার কারণে কৃষক আগ্রহ কম হওয়ায় গত বছর কম পরিমাণে জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে বাজারে বর্তমানে পাটের দাম ভালো রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাট চাষে কৃষককে উদ্ব"দ্ধ করতে প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। সেই সাথে পাটের ফলন বাড়াতে পাট গবেষণা থেকে উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আমরা আশা করছি আগামীতে জেলার পাটের আবাদ আরও বেশি পরিমান জমিতে বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close