বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

  ১৯ জুন, ২০২২

সরকারি খাল খননের মাটি নিয়ে ব্যবসা

বাগাতিপাড়ায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) পুনঃখনন করা বারুইপাড়া খালের উত্তোলন করা মাটি উধাও হয়ে যাচ্ছে। খাল খননের পরপরই অ্যাসকেভেটর বসিয়ে খালের এক পাড়ের উত্তোলিত মাটি প্রায় প্রতিদিনই কে বা কারা ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন পুলিশকে বিষয়টি অবগত করে লিখিত চিঠি দিয়েই দায়মুক্ত থাকার চেষ্টা করেছে। তবে মাটি পরিবহন বন্ধ করার জন্য পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয় বলে দাবি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলা সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বাগাতিপাড়া উপজেলার বারুইপাড়া খাল পুনঃখনন করে। উপজেলার বড়পুকুরিয়া রেললাইন ব্রিজ হতে বাগাতিপাড়া পৌর ভূমি অফিস পর্যন্ত ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই খাল পুনঃখননে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। গত ১২ এপ্রিল এই খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল। এই খাল খননের কারণে এলাকার প্রায় ১৫০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে।

এদিকে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে খাল পুনঃখননের সময় এর তলদেশ থেকে উত্তোলন করা মাটি খালের দুপাড়ে রাখা হয়। কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরপরই স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি সেই মাটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে। এসব উত্তোলনকৃত মাটি অ্যাসকেভেটর মেশিন দিয়ে ট্রাক্টর ভর্তি করে অজানা গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, এলাকার মসজিদ, কবরস্থান, মাদ্রাসা, মন্দির ও স্কুল-কলেজের নাম করে এসব সরকারি মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির দিকে আঙুল তুলেছেন কেউ কেউ। তাদের অভিযোগ আব্দুল গণি নামে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ্যে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হলেও তা বন্ধের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি কাউকে। তবে পুলিশের দাবি, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক এসব মাটি পরিবহন বন্ধ করা হয়।

খালের পাড়ে মাটি সরানোর কাজে নিয়োজিত ইয়াকুব নামে এক শ্রমিকের কাছে মাটি কোথায় যাচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এলাকার এমপির সঙ্গে কথা বলে মাটিগুলো বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে শুনেছেন।

স্থানীয় কৃষক মোতালেব আলী বলেন, সরকারি এই খাল পুনঃখননের ফলে জমিতে যেমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না, তেমনি খরা মৌসুমে এই খালে সংরক্ষিত পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মাটি কোথায় যাচ্ছে বলতে পারবেন না। পুলিশ এসব মাটি নেওয়া বন্ধ করেছিল। কিন্তু এক দিন বন্ধ থাকার পর তা আবার চালু হয়েছে।

অ্যাসকেভেটর চালক ইব্রাহিম আলী জানান, প্রতিদিন প্রায় ১০০ ট্রাক্টর মাটি ভর্তি করা হয়। মাটি কার নির্দেশে এবং কোথায় যাচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তার নাম ঠিকানা জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

বাগাতিপাড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল গণি মাটি বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খননের মাটি মানুষের জমির ওপর রাখা হয়েছে। জমি মালিকরা তাদের জমির ওপর মাটি রাখতে দেবেন না। এ ছাড়া স্থানীয় এমপির মৌখিক অনুমতিসাপেক্ষে ওই মাটি এলাকার বিভিন্ন কবরস্থানসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাক্টর ও ভেকু মেশিনের খরচ উত্তোলনের জন্য কিছু জায়গায় এই মাটি বিক্রি করা হয়েছে।

বিএমডিএর নাটোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আহসানুল করিম বলেন, খাল পুনঃখননের উত্তোলন করা মাটি এলাকার কতিপয় ব্যক্তি জোরপূর্বক ট্রাক্টরের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে অবগতি করাসহ সরকারি সম্পদ রক্ষার নিমিত্তে খালের মাটি যাতে কেউ নিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য আইনগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনও বরাবর লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে অবৈধভাবে ট্রাক্টরে করে মাটি বহন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, বিষয়টি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব। জোরপূর্বক মাটি নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশাসনিক কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close