টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ২৪ মে, ২০২২

এক মণ ধানেও মিলছে না শ্রমিক

ঘূর্ণিঝড়-রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে টাঙ্গাইলে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ফসল বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলার ১২ উপজেলায় নিম্নাঞ্চল টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে পাকা ধান। আবার কয়েকটি উপজেলায় পাকা বোরো ধান পানিতে ডুবে পচেও গেছে। হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে বাজারে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়। ফলে ১ মণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে না পারায় মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শ্রমিক সংকট হলেও উত্তরবঙ্গের ধান কাটা শ্রমিকরা দিন মজুর হিসেবে ধান কাটতে ভিড় করছেন জেলার বাসাইল, সখীপুর, মির্জাপুর, কালিহাতী, দেলদুয়ার, নাগরপুর ও সদর উপজেলার করটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় দলবদ্ধ হয়ে শ্রমিকরা ধান চাষিদের বাড়িতে চুক্তিতে ধান কাটতে যাচ্ছেন।

গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক কেনা-বেচার দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও সদর উপজেলার করটিয়াতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ৪ থেকে ১০ জন করে গ্রুপ হয়ে ধান কাটতে যান তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমিক কেনা-বেচা হয়। এ হাটে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সর্বদা নজর রাখছেন স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক শহিদ মিয়া, আযম আলী ও রফিক খানসহ অনেকেই বলেন, কয়েকদিন আগে নিজের এলাকায় ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাড়িতে বসে থেকে কী করব। জানতে পারলাম টাঙ্গাইলে ধানকাটা শ্রমিকের প্রতিদিন মজুরি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। তাই এলাকার ৪ জনের একটি গ্রুপ এলেঙ্গায় শ্রমিক হাটে উঠেছি।

রংপুর থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক কাশেম মিয়া, শাকিল খান, আলতাব মিয়াসহ আরও অনেকেই বলেন, গতকাল সোমবার সকালে করটিয়া আইছি। স্থানীয় অনেক গেরোস্থরা দামণ্ডদর করছেন। তার মধ্যে কেউ কেউ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিন মজুরি হিসেবে বলছেন। পরে ১ হাজার ১৫০ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করতে যাচ্ছি।

ধান কাটা শ্রমিক নিতে আসা ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইলের নুরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে পানি এলাকায় আসতে শুরু করেছে। যেকোনো সময় পানি এসে তলিয়ে যেতে পারে আমার সাড়ে ৪ বিঘা জমি। এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক সংকট। করটিয়া ধান কাটা শ্রমিক কেনা-বেচা হয় শুনে এখানে আসছি। ১ হাজার ১৫০ টাকা করে ৫ জন শ্রমিক নিয়েছি। আবার ৩ বেলা খাবার দিতে হবে। শ্রমিক প্রতি ১ হাজার ৩০০ টাকা খরচ পরবে। ধানের যে দাম বর্তমানে তা আমাদের লোকসানে পরতে হচ্ছে।

এলেঙ্গা থেকে শ্রমিক নিতে আসা সরাতৈল গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ইতোমধ্যে বৃষ্টির পানিতে পাকা ধান শুয়ে পড়েছে। ধানের গোড়া পচন শুরু হয়েছে। লোক পাওয়া যায় না। এলাকাতে যারা ধান কাটার কাজ করেন তারাও নিজেদের ধান কাটতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ পানির কথা শুনে কাজ করতেও চান না। এ জন্য এলেঙ্গায় এসেছি উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক নিতে।

এ ব্যাপারে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এলেঙ্গায় শ্রমিকের হাট গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে কোনো শ্রমিকদের নিরাপত্তার অবনতির ঘটনা ঘটেনি। তারপরেও আমরা সজাগ আছি, যাতে তাদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা না হয়। তারপরও যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close