মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

কাঠের চাকায় ঘোরে না মজিদের জীবিকার চাকা

১৯৪০ সালে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে গরুর গাড়ি তৈরির কারিগর আবদুল মজিদ নামের এক যুবক ঝিনাইদহের মহেশপুরে যান। তিনিই সর্বপ্রথম মহেশপুর শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে সড়কের পাশে পড়ে থাকা জায়গায় একটি কাঠের চাকা ও গরুর গাড়ি তৈরি কারখানা গড়ে তোলেন। এরপর আবদুল মজিদের দেখাদেখি একই এলাকা থেকে অনেকেই এসে একই পেশায় কাজ শুরু করেন। উপজেলা জুড়ে প্রায় ৫০টিরও বেশি জায়গায় এই কারখানা ছিল।

কিন্তু দীর্ঘদিনের সেই পেশার এখন আর সুবিধা করতে পারছেন না কারিগররা। বাধ্য হয়ে অনেকে পাল্টিয়ে ফেলেছেন তাদের বাপ-দাদার পেশা। আবার অনেকে চলে গেছে তাদের নিজ জন্মভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

চাকা তৈরির কারিগর আবদুল মজিদ এখন বৃদ্ধ। এই পেশায় জীবনের সচ্ছলতা না এলেও অকৃত্রিম ভালোবাসায় ছাড়তে পারেননি এই পেশা। দু-একটা কাজ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই ছেলেমেয়ে নিয়ে থেকে গেছেন মহেশপুরে।

আব্দুল মজিদ বলেন, একসময় গাড়ির চাকা তৈরির প্রচুর চাপ ছিল। তবে এখন আর কোন চাহিদা নেই বললেই চলে। তবুও এই পেশাকে ভালবেসে পড়ে আছি মহেশপুরে। এই পেশা ছেড়ে যেতে মন চায় না। দুই একটি চাকা তৈরির অর্ডার পাই। এতেই কোন রকমে টিকে আছি। আর এভাবেই নিজ পেশাকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে জীবনের শেষ দিন পার করতে চান বলে জানান তিনি।

সভ্যতার অগ্রগতিতে চাকা আবিষ্কারের পর জীবনের গতি বেড়েছে পূূর্বাপেক্ষা অধিক। তবে প্রথমে কে কোথায় চাকা আবিষ্কার করেছেন এর কোন দলিল না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয় যিশু খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন মেসোপটেমিসায় প্রথম চাকা আবিস্কৃত হয়।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার ২০০ অব্দের দিকে মিশরে যান্ত্রিক কাজে চাকার ব্যবহার শুরু হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে স্কটিশ আবিষ্কারক জন ডানলপ ১৮৮৮ সালে মোটর গাড়িতে ব্যবহারোপযোগী চাকা আবিষ্কার করেন। যার ফলে রেলগাড়ি, বিমান, ওয়াগন, মোটরগাড়ি, গরু-মহিষের গাড়ি, সাইকেল, রিকসা, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে চাকার ব্যবহার হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজকে সহজ করতে গ্রামীণ জনপদের শুরু হয় গরু-মহিষ কিংবা ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার। কৃষি কাজ, ব্যবসা-বানিজ্য ও যাতাযাতের সকল মাধ্যম ছিলো কাঠের চাকার গাড়ি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, সকল কাজে এ গাড়ির কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে গরু-মহিষের গাড়িগুলো এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। তবে এটা আমাদের ঐহিত্য। এটাকে টিকিয়ে রাখা দরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close