আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বিদেশ যাচ্ছে আদমদীঘির মাদুর

বগুড়ার আদমদীঘির তৈরি মাদুরের খ্যাতি রয়েছে বিশ্ববাজারে। নিপুণ হাতে গড়া এ মাদুরশিল্প এখন শুধু দেশে নয় বিশ্ববাজারেও নাম ছড়িয়েছে। এই শিল্পকে ভর করে এলাকায় মানুষ দরিদ্রতাকে জয় করেছে। কোনো রকম প্রচার-প্রচারণা ও সরকারি-বেসরকারি সাহায্য ছাড়াই এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল এক কর্মক্ষেত্র।

উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের ছাতনী ও ঢেকড়া গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মাদুর পেশায় নিয়োজিত। এই গ্রাম দুটিতে মাদুর শিল্পের বিকাশ দেখে পার্শ্ববর্তী বদলা কাশিমপুর কেল্লাপাড়া ত্রিমোহনী রানীনগর এলাকার শ্রমিকরা এ শিল্পকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কম খরচে অধিক উৎপাদন হওয়ায় যন্ত্রপাতির ঝুঁকি ঝামেলা নেই। ফলে সহজে মাদুর তৈরি করা সম্ভব। একটি মাদুর তৈরি করতে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে। যা বুননের জন্যে মাত্র দুজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।

ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে উন্নত বীজ মানের এনে এ অঞ্চলে বনপাতিসহ পাতির চাষ শুরু হয়েছে। মাদুরের উচ্চতা অনুসারে দাম নির্ধারিত হয়। দেড় হাতি মাদুর বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকায়, চার হাতি মাদুর বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়, ছয় হাতি মাদুর বিক্রি হয় ১০০-১২০ টাকায়। পাইকারিভাবে বিক্রির জন্য ক্রেতারা ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান।

গত দুই বছর আগে এই উপজেলার কাছে ত্রিমোহনী এলাকায় এবং আদমদীঘি ইউনিয়নের হালালিয়ার হাটে প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির মিল স্থাপন হয়। তারপর থেকে পাতির তৈরি মাদুরের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুরের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, তারাপুর, কাজিপুর, ছাতনী, ঢেকড়া, প্রান্নাথপুর, শিমুলিয়া, মালশনসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত বেকার তরুণ-তরণী প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করছেন।

প্লাস্টিকের মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাইপ। মিল মালিকরা প্রতি গজ পাইপ ২০ টাকায় খুচরা বিক্রি করে। তিন-চার হাত লম্বা প্রতিটি প্লাস্টিক মাদুর পাইকারি ৮০-৯০ টাকা দরে ও নকশা ভেদে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা তৈরিতে খরচ হয় ৫০-৭০ টাকা। এ ব্যবসা জনপ্রিয় ও লাভজনক হওয়ায় পাতির তৈরি মাদুর ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা।

ব্যাপক চাহিদার কারণে প্লাস্টিক পাইপ তৈরির মিল উপকরণ সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এলাকার মাদুর শিল্প ভারত, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ইরান, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

ছাতনী গ্রামের মাদুর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখার প্রয়োজন। এ ছাড়া বর্তমানে এলাকার রেলওয়ে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় মাদুর পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সরকারি পর্যায়ে মাদুর শিল্পের উন্নয়নে ঋণ ব্যবস্থা করা হলে এই শিল্পের ব্যাপক বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

সান্তাহার ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ হক টুলু জানান, বন্ধ থাকা হেলালিয়া রেলস্টেশন চালু বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে কথা বলা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close