ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ)

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

রেশমে দিনবদলের স্বপ্ন কৃষকের

নওগাঁয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রেশম চাষ। অনেকেই রেশম চাষ করে সফল হয়েছেন। এক সময় কৃষিপণ্যের মধ্যে তুঁঁত চাষ ছিল অন্যতম। তুঁত চাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বাড়িতে বসে থাকা মহিলাদের নিয়েও তুঁত গাছ চাষ করা যায় বলে এতে খরচ কম হয়।

একই জমিতে বছরে তিনবারের বেশি ফসল চাষ করা হলেও তেমন লাভ হয় না। কিন্তু তুঁত চাষ দুই থেকে চারবার করা যায়। এতে যেমন অধিক ফসল পাওয়া যায়, তেমনি লাভও হয় বেশি। কাপড় বুননের জন্য সুতার বিকল্প নেই। মোটা সুতার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আর মোটা সুতা দিয়ে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয় কাপড় তৈরি করা যায়।

যদি অধিক হারে রেশম চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মোটা সুতা দিয়ে কাপড় তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় দক্ষ কারিগর দিয়ে কম পরিশ্রমে বেশি কাপড় বুনে অধিক লাভ করা সম্ভব। রেশম চাষ বদলে দিতে পারে মহাদেবপুরসহ নওগাঁ জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান।

রেশম চাষি বেলাল হোসেন ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার ভীমপুর গ্রামে রেশম চাষে দ্রুত সাফল্য আসছে। এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব জমি থেকে রেশম গুটি উৎপাদন হচ্ছে, যা থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার সুতা পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী রেশম গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে উপজেলায় রেশম চাষ করা হয়। উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ক্যানেলের প্রায় ২ হাজার মিটার রাস্তার পাশে তুঁত গাছ চাষ করছেন বেলাল হোসেন।

রেশম হচ্ছে এক ধরনের পোকার মুখ থেকে নির্গত লালা দ্বারা তৈরি আঠা, যা বাতাসে শুকিয়ে তৈরি হয় আঁশ বা সুতা। আর এটিই হলো রেশম সুতা। বিভিন্ন পশু-পাখির মতো এ পোকাগুলোও বসবাসের জন্য ‘ঘর’ তৈরি করে। এদের তৈরি ঘর বা খোল রেশম গুটি নামে পরিচিত। এই গুটিতে থাকে শুধু সুতা আর আঠা। গরম পানিতে রেশম গুটি প্রয়োজনমতো সিদ্ধ করে নিয়ে সুতা উঠাতে হয়। সুতা উঠানোর পর মরা পোকাগুলোও ফেল না নয়। এসবে থাকে আমিষ ও ফ্যাট। রেশম পোকার ফ্যাট দিয়ে বিভিন্ন মেশিনের লুব্রিকেটিং অয়েল তৈরি হয়। এটি বিভিন্ন কসমেটিকস ও ওষুধশিল্পে ব্যবহৃত হয়। আর আমিষ দিয়ে হাঁস, মুরগি, মাছের খাবারসহ জৈবসার তৈরি হয়।

তুঁত চাষি বেলাল হোসেন বলেন, আমি গত দুই বছর আগে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তুঁত গাছ চাষ করতে শুরু করি। সফলভাবে রেশম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এর আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম, এখন রেশম চাষ করে আমার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। ক্যানেলের ধারের জমিতে বছরে দুবার তুঁত গাছ চাষাবাদ করি। প্রতি কেজি রেশম সুতার মূল্য প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। সরকারিভাবে যদি আরো কোনো সহযোগিতা পেতাম তাহলে রেশম চাষ করে আমার সফলতার পাশাপাশি গ্রামের বেকার সমস্যার সমাধান হতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন সড়ক এবং ক্যানেলের পাশের্^ তুঁত গাছ চাষ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে এবং লাভবানও হয়েছেন উদ্যোক্তারা। উপজেলায় আরো তিনজন রেশমের চাষ শুরু করেছেন। তবে বেলাল হোসেন ব্যাপকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। চলতি বছর তিনি ১৫ কেজি রেশম উৎপাদন করেছেন। যার আনুমানিক মুল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে সুতারও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। রেশম গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close