ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) ও বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি

  ১১ আগস্ট, ২০২০

দফায় দফায় বন্যার পর আমনের বীজতলা সংকট

বন্যার পর কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে আমন ধানের চারার তীব্র সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা। অপরদিকে ধানের চারা রোপণের জন্য জমি চাষ করা, আগাছা নিড়ানো, পানি ও সার দেওয়াসহ নানা দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

এদিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জে তিন দফায় বন্যার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। রোপা আমনের বীজতলা সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে মো. মনিরুজ্জামান, জামালপুরের বকশীগঞ্জ থেকে ফাতিউল হাফিজ বাবুর পাঠানো প্রতিবেদন

ভূরুঙ্গামারী প্রতিনিধি জানান, উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বর্ষার শুরুতেই প্রচুর বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট দুই দফা বন্যায় বেশিরভাগ এলাকায় এখনো ফসলের মাঠে হাঁটুপানি। তবে যেসব এলাকার জমি থেকে পানি সরে গেছে সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে আমন চারার সংকট। ফলে ফসলের মাঠ ফাঁকা পড়ে আছে।

এদিকে উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্যায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমনের চারার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বন্যায় নি¤œাঞ্চলের বীজতলা ডুবে থাকায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চারা সংগ্রহে ছুটছেন চাষিরা তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলে।

উপজেলার পাইকের ছড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম জানান, চার বিঘা ভালো ফলনের আশায় উন্নত জাতের বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন। বন্যায় তার সম্পূর্ণ বীজতলা ডুবে গেছে। এখন পাগলার হাট এলাকা থেকে আমন চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন যার দাম অনেক বেশি। এক বিঘা জমিতে চারা লাগাতে দাম পড়ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। একই অবস্থা হেলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক বাদশা, গনাইরকুটি গ্রামের জহর আলী, চরবলদিয়া গ্রামের কৃষক রাজ্জাকেরর।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, দুই দফা বন্যায় উপজেলার ১২ হাজার ৮৮৪টি পরিবারের ৭৫০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে বীজতলা ১১৬ হেক্টর, আউশ ২০ হেক্টর, ভুট্টা ১৫ হেক্টর, শাকসবজি ২৮০ হেক্টর, মরিচ ৬০ হেক্টর এবং পাট ১৭২ হেক্টর। এদিকে চলতি মৌসুমে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৮৮৫ হেক্টর ।

ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, উপজেলায় বন্যায় এবার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ ট্রে-সিস্টেম, ভাসমান পদ্ধতি ও কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষি প্রণোদনা হিসেবে রোপণ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকদের ১৬ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপণ করে দেওয়া হবে এবং ৬৬০ জন কৃষককে ১ বিঘা করে ৬৬০ বিঘা জমিতে রোপণের জন্য আমন চারা প্রদান করা হবে।

বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের গত ২৭ জুন, ১২ জুলাই ও ২০ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় বকশীগঞ্জে উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের শতভাগ, মেরুরচর ইউনিয়নের ৯০ ভাগ, বগারচর, নিলক্ষিয়া ও বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে ডুবে যায়।

তিন দফায় মাসাধিককাল স্থায়ী হয় বন্যা। এর আগে উপজেলার সাধুরপাড়া, মেরুরচরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ১ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করা হয়। কিন্তু বন্যার পানি দীর্ঘ হওয়ায় ১ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির আউশ ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়। এছাড়া ৩০৮ হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে।

বন্যার্ত এলাকায় রোপা আমন ধানের বীজতলা না হওয়ায় এই দুই ইউনিয়নে এখনো ধান চাষ শুরু করতে পারেননি কৃষক। সরেজমিনে ওই এলাকায় এখনো রোপা আমন আবাদ শুরু হয়নি দেখা যায়। তবে পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী উপজেলা থেকে চড়া দামে বীজতলা ক্রয় করে রোপণ শুরু করেছেন। এতে করে কৃষকের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতর জানায়, চলতি রোপা আমনের মৌসুমে এ উপজেলায় ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বীজতলা সংকট, কৃষকের বাড়তি খরচের কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ জানান, তিন দফা বন্যার পর অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বীজতলা সরবরাহের জন্য বীজতলা তৈরির কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি অনুকূল পরিবেশ পেলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close