সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ০৫ জুলাই, ২০২০

সোনারগাঁয়ে ব্যাটারিচালিত অটো নিয়ে রাস্তায় শিশুরা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সবখানেই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালকের আসনে দেখা যাচ্ছে শিশুদের। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বৈশি^ক মহামারী করোনার প্রার্দুভাব শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবারে খাদ্যের যোগান দিতে তারা এই কাজ শুরু করেছে। এসব শিশুদের বয়স অনুর্ধ ৭ থেকে ১২ বছর।

শিশুর অভিভাবকরা বলেছেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে অন্যান্য স্থানের মতো নারায়ণগঞ্জে স্থবির হয়ে পড়েছে সরকারি, বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা। এতে জেলার সোনারগাঁয়ে জীবিকার তাগিদে মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিশু একপ্রকার বাধ্য হয়ে ছোটখাটো কাজ ও অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।

শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বলছে, শ্রমনীতিমালা অনুযায়ী যেসব নিয়ম রয়েছে করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন মানা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে প্রশাসনিক কাঠামোতে বিশেষ নজরদারী ও তদারকি ব্যবস্থা চালু না হলে পুরোপুরি শিশু শ্রম বন্ধ করা অসম্ভব।

উপজেলার তাতুয়াকান্দি এলাকার অটো চালক শিশু রিফাত হোসেন (১০)। চলার পথে প্রসঙ্গে এই শিশু বলে, তার বাবা একজন দিনমজুর। করোনায় তার কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আড়াই মাস ধরে পরিবারে কোন আয় উপার্জন নেই। সরকারি ত্রাণ সহায়তায় ঈদের আগে পর্যন্ত কোনো মতে সংসার চললেও ৫ সদস্যের পরিবারের অবস্থা অনেকটা নাজুক। তাই পরিবারের সবার খাবারের যোগান দিতে বাধ্য হয়ে ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নামছি। করোনার পাশাপাশি ও বৃষ্টি বাদলার কারণে মানুষ তেমন বের না হওয়ায় যাত্রীও পাওয়া যায় না। একই ধরনে অভিজ্ঞতার কথা জানায় উপজেলার ভিন্নিপাড়া এলাকার অটো চালক শিশু জিহাদ হোসেন (১১)।

এদিকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় শ্রমনীতিমালা অনুযায়ী ১৪ বছর বয়সের নিচে শিশুদের কাজ করার বিধান নেই। কিন্তু করোনার কারণে সোনারগাঁয়ে মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের ৭ থেকে ১২ বছর বয়সের অনেক শিশুকে বিভিন্ন শ্রম ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। দেশের সব শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও অভিভাবক সচেতনতার অভাবে এখনো অনেক শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে শিশুরা কাজ করছে। বেশির ভাগ শিশুই হোটেল রেস্তোরায়, রুটি, বিস্কুটের কারখানা বেকারিতে, রিকশাচালনা, ওয়ার্কসপ ওয়েল্ডিং, মাছ বাজারে পানি টানা, ফার্নিচার দোকানে রামদা দিয়ে কাঠ ছিলা, ড্রিল মেশিনে ছিদ্র করা, ইট ভাঙ্গা, ভাঙ্গারী টোকাই ও ব্যক্তি মালিকানা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রম দিচ্ছে।

উন্নয়ন সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মী আব্দুল মান্নান বলেন, শ্রমনীতিমালা অনুযায়ী শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন ভিন্নচিত্র। এ অবস্থা স্বাভাবিক হলেই শিশুশ্রম বন্ধে আমরা তদারকি করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করব। তিনি মনে করেন, দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ও শিশু অধিকার আইন যতদিন কার্যকরি হবে না, তত দিন শিশু অধিকার আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

শিশু অধিকার রক্ষা ও সৃজনশীলতার বিকাশে কাজ করে দেশব্যাপি সংগঠন ‘খেলাঘর’। সংগঠনের সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সম্পাদক রাজা রহমান রাজন জানান, হত দরিদ্র পরিবারের শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের খেলাঘর সংগঠনের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা এই মূহুর্তে মাঠ পর্যায়ে যেতে পারছি না। তবে কোন শিশুর উপর অমানবিক নির্যাতনের খবর পেলেই আমরা প্রশাসনিক সহায়তায় সেখানে গিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে প্রথমে অভিভাবক সচেতনতা, পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে তদারকি করে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বিষয়ে জনবলের অভাবে আমরা এই মুহূর্তে সঠিক তদরকি ব্যবস্থা জোরদার করতে পারছি না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য উপজেলার বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শিশুদের কাজ দেয়া ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close