সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) ও রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সিরাজদিখান ও রাজারহাট

আলুর বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। দুই উপজেলার কৃষকরা এখন অঅলু তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আলু তোলার কাজ করতে জামালপুরের মেলান্দ উপজেলা থেকে এসেছেন ১২ জনের একদল শ্রমিক।

খাইরুল নামের একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা প্রতি বছরই চান্দের চর এলাকায় নূর ইসলাম বেপারীর বাড়িতে আসি। আলুর জমি নিড়ানি থেকে শুরু করে আলু লাগানো এবং আলু উঠানো পর্যন্ত শেষ করে তবেই বাড়িতে যাই।

একই দলের জামালপুরের আরেক মহিলা শ্রমিক মালেকা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা পুরুষের সমপরিমাণ সময় কাজ করি আমাদের রোজ দেয় আড়াই শত টাকা। আর একই সময়ে কাজ করে পুরুষ পায় চারশত টাকা।

আলু তোলায় ব্যস্ত জামালপুরের আরেক মহিলা শ্রমিক সুন্দরী বলেন, এক বিঘা জমিনের আলু তুলতে ১০ জন শ্রমিককে সকাল থেকে বিকেল পর্যš কাজ করতে হয়। ক্ষেত থেকে তোলার পর বস্তাবন্দী করা এবং পিকাপ ভ্যানে উঠানো পর্যন্ত আমাদের কাজ।

কৃষক নূর ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন এক বিঘা জমির আলু তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করি। বাজারে পাইকারি মূল্য ১২/১৩ টাকা কেজি। গত বছর একই সময়ে বর্তমান আলুর মূল্য ছিলো ১০-৮ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ বস্তা আলু হয়। প্রতি বস্তা আলুর বাজারদর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। লাভ হবে কিনা জানিনা, আলু চাষ আমার কাছে নেশার মতো।

তিনি জানান, এ বছর আলুর তেমন রোগ হয়নি। কিছু কিছু আলুতে দাউদ আর এসিড জাতীয় রোগ দেখা দেয়, তবে সেগুলো অতোটা মারাত্মক না। এ বছর লাভবান হবো বলে আশাবাদি।

জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জ। অধিক লাভের আশায় মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায় এবার ব্যাপক আলুর চাষ করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে আলুর জমিতে একদিকে চলছে পরিচর্যার কাজ। অন্যদিকে আলু উঠানোর কাজ। ভালো ফলন ও সঠিক মূল্য পেলে এবার খরচ বাদে বিঘা প্রতি জমিতে মোটা অংকের টাকা লাভের আশা করছেন তারা।

উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে কয়েক দফা নতুন আলু তুলে বাজারজাত করে ফেলেছে ইতোমধ্যে, তবে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হচ্ছে এখন।

সিরাজদিখান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এবার আলুর বা¤পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। সিরাজদিখান উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক চাষি আলু চাষের সঙ্গে জড়িত। গত কয়েক বছরে আলু চাষে লোকসানে অনেক চাষিকে সর্বস্বান্ত করে দিলেও তারা আবারো নব উদ্যমে নতুন মৌসুমের শুরুতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে আলু চাষ করছেন। উপজেলায় একটানা কয়েক বছর একাধিকবার আলুর বা¤পার ফলনের পরেও লাভের মুখ দেখেননি কৃষকরা। মধ্যস্বত্বভোগী মজুদদার ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও গত কয়েক বছর ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। বাজারে আলুর ব্যাপক দরপতনে মূলধন হারিয়েছেন এ অঞ্চলের অনেক কৃষক। তার পরও অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করতে না পারায় আলু চাষই করে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর আলুর গাছ ভাল হয়েছে। এবার আলু রোপন করা হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনে কৃষকের মনে আনন্দের ঢেউ দোলা দিচ্ছে। শিশির ভেজা সকাল হতে না হতেই আলু উঠাতে কৃষক মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কথা হয় কৃষক এনামুলের সাথে। হাসিমুখে তিনি বলেন, আলু চাষের হাজারো সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যার কারণে আলুর ফলন ভালো হবেনা মনে করেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, যথাসময়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করার ফলে কৃষকরা সকল সমস্যা মোকাবেলা করে আলুর ভালো ফলনে সক্ষম হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রাজারহাট উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এবার উপজেলায় আলু উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন প্রতি শতাংশ জমিতে আড়াই মণ আলু উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি আলুর মূল্য সাড়ে ৯ টাকা। প্রতি মণ আলু ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close