মামুন আহম্মেদ, বাগেরহাট

  ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

সব প্রস্তুতি নিয়েও সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা

ইলিশ মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও ইলিশ আহরণে সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা। মৌসুমের শুরুতেই সরকার ৬৫ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞাজারি করায় থমকে গেছে সবকিছু। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে হতাশ হয়ে পড়েছেন ট্রলার মালিক ও মহাজনরা। তবে জেলা মৎস্য অফিস বলছে, মূলত মা মাছ রক্ষা এবং মৎস্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত।

প্রধান মৌসুম হিসেবে ১৫ বৈশাখ থেকেই ইলিশ আরহণের জন্য জেলেদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু এ বছর তাদের সেই আশা শংকায় পরিণত হয়েছে। বুক ভরা হতাশা নিয়ে ট্রলার ঘাটে অপেক্ষা করছেন শত শত জেলে। ১৮ মে থেকে পরবর্তী ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার

এদিকে প্রধান মৌসুমের শুরুতেই অবরোধ ঘোষণা করায় ফুসে উঠেছে উপকূলসহ বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক মৎস্য আহরণকারী সারা দেশের জেলে সম্প্রদায়। সরকারের এমন নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছেন তারা।

ইতিমধ্যে জেলা, উপজেলায় আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে সব জেলে, ট্রলার মালিক, আড়ৎদার, মহাজনরা একত্রিত হবেন উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। সেখানে হাজারো মৎস্যজীবী উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ প্রধানমন্ত্রী কাছে স্মাকলিপি পেশ করবেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি ও জাতীয় মৎস্য সমিতির শরণখোলা উপজেলা শাখার নেতারা এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী এম সাইফুল ইসলাম খোকন ও মৎস্য আড়ৎদার মো. কবির হাওলাদার বলেন, সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঘোষিত ৬৫ দিন অবরোধ ঘোষনায় জেলে সম্প্রদায়ে হতাশা নেমে এসেছে। ইলিশের ভরা মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ট্রলার মালিক, আড়ৎদার, মহাজন সবাইকেই চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাছাড়া দরিদ্র জেলে পরিবারে হাহাকার শুরু হয়ে যাবে।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও পাশের দেশ ভারতে জেলেদেরে কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ থাকবে না। আমাদের দেশের অবরোধের সুবিধাটা তারাই ভোগ করবে। এমনিতেই তারা বঙ্গোপসাগরে আমাদের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবশে করে সারা বছরই মৎস্য আহরণ করছে। আর এই অবরোধের সুযোগে ভারতী জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলিং ট্রলার দিয়ে আমাদের ইলিশ ছেঁকে নিয়ে যাবে তা কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না। তাই জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবীকার কথা ভেবে সরকারকে এই অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানাই।

বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, একটি ট্রলার সাগরে মাছ ধরার উপযোগী করে পাঠানোর জন্য প্রত্যেক মহাজন ইতোমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এমন সময় সরকারের জেলে বিরোধী ঘোষনায় সবাই হতাশ হয়েছে। রোববার নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদের সারা দেশের মৎস্যজীবীরা বরগুনায় উপস্থিত হয়ে আন্দোলন করবে। সেখান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমল কান্তি রায় বলেন, এ সময়টাতে ইলিশ, চিংড়িসহ সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পেটে ডিম আসে এবং ডিম ছাড়ে। মূলত মা মাছ রক্ষা এবং মৎস্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া অন্য দেশের জেলেরা যাতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মৎস্য আহরণ করতে না পারে সে ব্যাপারে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close