আকবর হোসেন, মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

ডাকাতিয়ানির্ভর বোরো চাষি হতাশ

পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার একমাত্র নদী ডাকাতিয়া। খননের না হওয়ায় শুকিয়ে গেছে এর বিভিন্ন অংশ। এতে এই নদীর ওপর নির্ভরশীল উপজেলার কৃষিকাজ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ বছর পানি অভাবে আটকে আছে ইরি-বোরোর আবাদ। ফলে উপজেলার খাদ্য খাটতি বেড়ে যাবে।

প্রায় চোদ্দ বছর আগে ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা গঠিত মনোহরগঞ্জ উপজেলা।মনোহরগঞ্জ উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১০ হাজার ১৫ হেক্টর। এর মধ্যে বোরো আবাদ হয় ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। বোরো আবাদ পুরোটাই নির্ভর করে ডাকাতিয়া নদীর পানির উপর। ৩ লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই উপজেলার বাৎসরিক খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন।

মধ্য সতেরো শতকের কোম্পনির কর্মকর্তাদের তথ্য থেকে ধারণা করা হয়, সে সময় মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা এই নদী পথে নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করতে। নদীতে তাদের ডাকাতির উপদ্রবের কারণে এই নদী পথ ডাকাতিয়া নদী হিসেবে খ্যাত হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন মেঘনার উপনদী ডাকাতিয়া কুমিল্লার বাগসারা এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ২০৭ কিলোমিটার নদীটি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ওপর দিয়ে চাঁদপুরের মেঘনায় মিশেছে।

লাকসাম উপজেলা বাতায়ন সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীটি লাকসাম পৌরসভা, বাকই, মুদাফ্ফরগঞ্জ, কান্দিরপাড় এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এক সময় এ নদীই ছিল উপজেলাবাসীর যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানেও সীমিত আকারে ডাকাতিয়া নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল পার করা হয়। বর্তমানে এই ডাকাতিয়া নদীর পানি দ্বারা শীত ও গরমকালে কৃষিকাজ করা হয়। অধিকন্তু এই নদীতে বিভিন্ন প্রকারের অনেক সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়।

ডাকাতিয়া অধ্যুসিত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, নদীর অনেক জায়গা শুকিয়ে গেছে। ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন বছরের ৩-৪ মাসই পানিতে ডুবে থাকে। আবার সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে মনোহরগঞ্জের ১০ হাজার হেক্টর (আড়াই একরে এক হেক্টর) জমিতে একাধিক ফসল আবাদ ব্যহত হচ্ছে। মাটি তার উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এখানে বছরে একটি মাত্র ফসল বোরো আবাদ হয়। এই বোরো ফসলই কোনো মতে বাঁচিয়ে রেখেছে এই অঞ্চলের মানুষকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতে ডাকাতিয়া শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এবং কখনো কখনো অনাবৃষ্টি বা আগাম বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার চাষীরা তাদের একমাত্র বোরো ফসলটিও নির্বিঘেœ ঘরে তুলতে পারেন না। সামান্য কিছু জমিতে ’সান্সক্রপ’ হিসেবে বোনা হয় আমন বা জলি আমন ধানের আবাদ হয়। কাঁওড়া, বটেশ্বর, তিলিবাজাল, বালাম, কটকতারাসহ কয়েকটি এলাকায় সনাতনীজাতের বোনা আমন চৈত্র-বৈশাখ মাসে লাগাতে হয়। এসব জাতের বোনা আমন কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে কেটে ঘরে তোলে চাষীরা। বিঘা প্রতি মাত্র দুই আড়াই মন ধান পেয়ে থাকেন। অথচ একই জমিতে রোপা আমন আবাদ করা গেলে বিঘা প্রতি ২০-২৫ মন ধান পাওয়া সম্ভব বলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের দাবি, সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা গেলে মনোহরগঞ্জ জলাবদ্ধতামুক্ত হতো, ডাকাতিয়া ফিরে পেতো নতুন যৌবন। পানি শূন্যতা ও জলাবদ্ধতা নিরশনসহ এখানকার কৃষির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার জরুরি সরকারি উদ্যোগ।

উপজেলা কৃর্ষি অফিসার (চার্জ) শাহানূর ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রতিবছর বন্যায় ডাকাতিয়া গভীরতা বদল হয়। গত বছর বন্যা হওয়ায় নদীতে পলি জমে আছে। ফলে নদীর তলদে ভরাট হওয়া শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি নেই। তাই নদী নির্ভর বোরো আবাদ সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, নদী খননের বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।

জানতে চাইলে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম বানু শান্তি বলেন, ইতোমধ্যে নদী ভরাটের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নদী খনন না হলে উপজেলার একমাত্র বোরো আবাদ সম্ভব হবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দ্রুতই এর খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close